রাজনীতির হিসাবে গরমিল!

0
623
blank
blank

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিলেও তাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্যে আপাতত নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্রন্টের রাজনৈতিক হিসাবে কিছুটা গরমিল দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত অন্য সাতজনের শপথ নেওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ভণ্ডুল হয়ে গেছে বলে মনে করছেন নেতারা।

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রথম দিন থেকেই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আসছে। সেই সঙ্গে বলে আসছে যে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শপথ নেবেন না। তবে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিসাব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সংসদে যোগদানের এক ধরনের পরামর্শ ছিল ফ্রন্টের কাছে। আর এটি নিয়ে ভেতরে ভেতরে কিছুটা আলোচনাও ছিল বলে বিএনপি সূত্রে জানা যায়।

একটি সূত্রের দাবি, সংসদে যোগ দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষীরা। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে ‘কথা বলার’ আশ্বাসও দিয়েছিলেন তাঁরা। যদিও বিষয়টি বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে সম্পূর্ণ ‘গোপনীয়’ ছিল; কিন্তু সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ নেওয়ায় ওই উদ্যোগ একেবারেই ভেস্তে গেল।

ঐক্যফ্রন্ট গড়ায় মধ্যস্থতাকারী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে বের করতে সময় লাগবে। তার চেয়ে সংসদে যোগদান করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁকে মুক্ত করলে ভালো হতো। কিন্তু সুলতান মোহাম্মদ মনসুর একা শপথ নেওয়ায় অনেক ক্ষতি হলো। গতকাল শুক্রবার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা চেয়েছে বিএনপি সংসদে যাক। কিন্তু সুলতান মোহাম্মদ মনসুর যেভাবে যোগদান করেছেন তাতে প্রমাণ হয়েছে সরকার ইচ্ছা করলে যে কাউকে কিনতে পারে। বিএনপিকে এটা সরকারের চাপে রাখার কৌশল। তবে এই যোগদানে ফ্রন্টের ঐক্যে কোনো ক্ষতি হবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের শপথে ঐক্যের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ গণফোরাম তাঁকে বহিষ্কার করেছে। তবে তাঁরা বলেন, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদে যাওয়ার বিষয়ে তাঁদের কিছু জানা নেই।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদেশিরা সংসদে নিতে চান। কিন্তু কারচুপির পরিমাণটা তাঁরা হয়তো বুঝতে পারছেন না। তা ছাড়া সুলতান মোহাম্মদ মনসুর যেভাবে শপথ নিলেন, এরপর তো আর কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুষ্ট গরু চলে গেলে ঐক্যের কোনো ক্ষতি হবে না।’

জানা গেছে, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের ঘটনায় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা প্রচণ্ড ক্ষেপেছেন। সুলতান মনসুরকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। আইনগত পদক্ষেপসহ পরবর্তী করণীয় নিয়ে আজ শনিবার গণফোরামের এবং আগামী সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে সংসদের স্পিকার ও নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিতে পারে গণফোরাম। সংশ্লিষ্ট নেতাদের মতে, মনসুরের বহিষ্কার এবং এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে নির্বাচিত অন্য সাতজনের সংসদে যোগদানের সম্ভাবনা আর থাকছে না।

অন্যদিকে কী প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার ‘মুক্তি’ ঘটবে সে ফর্মুলা বের করার একটি উদ্যোগও একই সঙ্গে ভেস্তে গেছে বলে মনে করে কেউ কেউ। বিএনপির একটি অংশ রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদাকে মুক্ত করার কথা বললেও বাস্তবে সেটি কতখানি সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে সংসদে যোগ দিয়ে পর্দার আড়ালে সমঝোতার মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করা যায় কি না এমন একটি আলোচনা আছে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে। যদিও খালেদা জিয়া কোনো সমঝোতা প্রস্তাব মানবেন বলে কেউ বিশ্বাস করে না।