রাজনৈতিক সংলাপ সহিংসতা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারে: মার্কিন রাষ্ট্রদূত

0
412
blank
Marsia Barnicut
blank

স্টাফ রিপোর্টার: গণতান্ত্রিক ইতিহাস, সহিষ্ণুতা, উদারতা এবং শান্তিপূর্ণ ধর্ম পালনের ঐতিহ্যই বাংলাদেশে সন্ত্রাস প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, সহিংসতা ও অস্থিরতাকে যারা পছন্দ করে তাদের মোকাবিলায় গঠনমূলক রাজনৈতিক সংলাপ, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং গতিশীল নাগরিক সমাজ ভূমিকা রাখতে পারে। গতকাল বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি এসব কথা বলেন। সুন্দরবনের রয়েল টাইগারের আকৃতিতে ভ্রাম্যমাণ বাসে সাজানো ‘টাইগার ক্যারাভ্যান’ উদ্বোধনী শেষে উপস্থিত সাংবাদিকরা বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের নতুন সতর্কবার্তার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। ওই সতর্কবার্তায় দেশটির ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করছেন তাতে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বিস্তৃতির আশঙ্কা রয়েছে। জবাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ‘বলিষ্ঠ নেতৃত্বের’ প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত আশা করেন এ ইস্যুতে তার অঙ্গীকার অব্যাহত থাকবে। তিনি একটি ভারসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সমাজের সবার সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে পারি। যেখানে সবাই তার উদ্বেগগুলো ব্যক্ত করতে পারবে।

তিনি বলেন, আগেও আমি বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগকে আমরা প্রশংসা করি। যে গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশকে টার্গেট করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্য দেশগুলোকে টার্গেট করেছে। সন্ত্রাস দমনে ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের শক্তিশালী উদ্যোগের বিষয়টি স্মরণ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ ইস্যুতে আমাদের বন্ধন সুদৃঢ়। এটি রক্ষায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সামপ্রতিক সময়ে শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র চর্চার যে ধারা বহমান রয়েছে তাকে উৎসাহিত করেন রাষ্ট্রদূত।
এর আগে খামারবাড়ীতে ‘বাঘ আমাদের গর্ব, বাঘ সুরক্ষা কবরো’- বিষয়ক এক আলোচনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট। সেখানে তিনি বলেন, বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে সুন্দরবন বাঁচলে জীব বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। বাংলাদেশের তরুণদের কাছে প্রত্যাশা তারা বাঘ রক্ষা করতে পারবে। বাঘ সংরক্ষণে দেশব্যাপী জনসচেতনতা কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। বন অধিদপ্তর, ইউএসএইড, ওয়াইল্ডটিম এবং ইউএসএইড এর বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প যৌথভাবে এর আয়োজন করে। সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য সজ্জিত ত্রিমাত্রিক টাইগার ক্যারাভ্যানটি দেশের ১০০ স্থানে প্রদর্শিত হবে। অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাঘ সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানান আয়োজকরা। অনুষ্ঠানের ‘টাইগার টক’ শীর্ষ আলোচনায় বন ও পরিবেশ সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুন্দরবন আমাদের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। আর বাঘ সুন্দরবনকে রক্ষা করে। যে জীব-বৈচিত্র্যের মধ্যে আমরা বেঁচে আছি, সেই জীব-বৈচিত্র্যকেই আমরা রক্ষা করতে পারছি না। তা দুঃখজনক। এক সময় প্রায় দেশের বনে বাঘ ছিল। এখন সুন্দরবনে মাত্র শতাধিক বাঘ রয়েছে। দর্শকের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সরকার আইন করে বসে নেই। মাঠ পর্যায়ে বাঘসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী রক্ষা ও এ সংক্রান্ত অপরাধ দমনে কঠোরভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের এমন উদ্যোগে ২০১২ সালের পর থেকে দেশে বাঘসহ বন্যপ্রাণী হত্যা ও চোরাচালনের অপরাধ কমে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আলোচনায় আরও অংশ নেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলী। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিনে রাস্তাঘাট, রেললাইন, জনবসতি ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে প্রচুর বন উজাড় হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। আগে প্রায় বনে বাঘ থাকলেও এখন কেবল মাত্র সুন্দরবনেই ১০৬ টি বাঘ রয়েছে। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের খালগুলোতে মিঠা পানির প্রবাহ কমে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়াসহ বেশকিছু কারণে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ইকো সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এতে বাঘ ও হরিণসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। সরকার দেশীয় উন্নয়ন সংস্থা, আমেরিকা, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের সহায়তায় সুন্দরবন রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বন্য প্রাণীর শুমারি পরিচালনায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে দিন দিন জরিপ পদ্ধতির উন্নতিও হচ্ছে। আগামী অক্টোবরে আবারও সুন্দরবনে বাঘ শুমারি হবে। অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত প্রতিবেদন এবং আলোচনায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাঘ বিপন্ন প্রায়। পূর্বে পৃথিবীতে লক্ষাধিক বাঘ থাকলেও কমতে কমতে এখন ১৩ টি দেশে মাত্র ৩ হাজার ২০০ টি বাঘ অবশিষ্ট রয়েছে। তা সংরক্ষণ করা না হলে অচিরেই বাঘ পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক ও খুলনা বিভাগের প্রধান বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আহমেদ, ইউএসএইড বাংলাদেশের ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এনার্জিক টিম লিডার ডেপুটি ডিরেক্টর ড. কার্ল উরস্টার, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যায়ের সাবেক ভিসি ও ওয়াইল্ড টিমের বোর্ড সদস্য অধ্যাপক নিতিশ চন্দ্র দেবনাথ, ওয়াইল্ড টিমের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ইউএসএআইডি’র বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের চিফ অব পার্টি গ্যারি কলিনস প্রমুখ বক্তৃতা করেন।