রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

0
966
blank

ঢাকা: বিচ্ছিন্নভাবে নয় সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেইসাথে বিএনপির সমর্থন গ্রহণ করে রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন বেগবান করতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আজ সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই আহবান জানিয়ে বলেন, রামপাল প্রকল্পের বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু করা যাবে না। আজকে শ্রদ্ধেয় আনু মুহাম্মদ সাহেবরা যে আন্দোলন করছেন, আমরা তাকে সমর্থন করি, আমরা সমর্থন দিয়েছি। তাদের উচিৎ হবে আমাদের সমর্থনটাকে গ্রহণ করা এবং সমগ্র জাতিকে এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এগিয়ে আসা। রামপালের বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা করার দলের নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব। এব্যাপারে প্রথমে খুলনার জনগণকে এর সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। তারপরই পুরো বাংলাদেশের মানুষ সম্পৃক্ত হবে। বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সেমিনার করে মানুষকে বুঝাতে হবে।
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কার্যালয়ে ‘জিয়া সাইবার দল’ আয়োজিত ‘সুন্দরবন বাঁচাও, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঠেকাও’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএনপির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান। খুলনার বাগেরহাট বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আল মোজাদ্দেদি আলফেছানি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রনু, সাংবাদিক রাশেদুল হক, শফিকুল ইসলাম রিবলু, মাহমুদ হাসান রাজু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে শুধু সুন্দরবনেরই ক্ষতি হবে না, ভবিষ্যতের জন্য এদেশের জনগণের ক্ষতি করবে। এই সরকার জনগণের মতামতের কোনো তোয়াক্কা করে না বলেই তারা গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কারণ যাদের কাছ থেকে তারা এই প্রকল্প নিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে কমিটমেন্ট করেছেন- এটা আমি করবই, তাতে যে মূল্যই দিতে হোক না কেনো। দেখুন কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপুরণের জন্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। আজকে আমরা নিজেরাই জলবায়ুকে ক্ষতিগ্রস্থ করছি, আমাদের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করছি। এদের কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। জাতীয় সংসদে রামপালের বিষয়টি কোনো আলোচনা না হওয়ারও সমালোচনা করেন ফখরুল।
আওয়ামী লীগের সদ্য সমাপ্ত সম্মেলন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেশে নির্বাচন নেই, অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে রয়েছে। সেখানে গণতন্ত্রে ফিরে আসার জন্যে, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্যে, জনগণের প্রতিনিধিত্বকে নিশ্চিত করার জন্যে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে পথ নির্দেশ দেবেন- সেটাই মানুষ আশা করেছিলো।
তিনি বলেন, আমরা বার বার বলেছি- আমাদের নেত্রী বলেছেন আসুন এই সঙ্কটগুলো নিরসন করবার জন্য আমরা একটা আলোচনায় বসি, সংলাপে বসি। সেখান থেকে একটা সমাধান করে নিয়ে আসি। কিন্তু এরা সেই আলোচনায় যেতে চায় না।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ভালো করেই জানে, সেটা সত্যিকার অর্থেই নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে তাদের ভরাডুবি হবে। সেই কারণে তারা সেই নির্বাচন দেখতে চায় না, গণতন্ত্রে ফিরে আসতে চায় না। এজন্য তারা বার বার করে বলে যে, গণতন্ত্র আমাদের সেকেন্ডারি বিষয়, প্রথম বিষয় না। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে ভয়-ভীতি, সন্ত্রাস করে, ত্রাস করে তারা দেশের মানুষকে বেশিদিন আটকিয়ে রাখতে পারবে না। তাই আমাদের ঐক্য, ঐক্য এবং ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এই আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করতে হবে, গণতন্ত্রকে বিনাসের যে চক্রান্ত তাকে ধ্বংস করতে হবে। ১৬ কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিশ্চিহ্ন করবার যে চক্রান্ত তা প্রতিরোধ করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।