শাস্তি নয়, সংশোধনই হোক জেলখানার মূল প্রতিপাদ্য

0
487
blank

blank

তোফায়েল আহমদ: রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ। কারাগারের সম্মুখে এই স্লোগান লেখা থাকে। কিন্তু বাস্তবে কী তাই? প্রায় ২ মাস কারাগারে থাকার দূর্লভ অভিজ্ঞতা হয়েছে।  গ্রেফতারের পর থেকে কারাগারে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত একেকজনের অভিজ্ঞতা একেকরকম হয়। এটা অনেকটা মামলা ও আসামির উপর নির্ভর করে। কারাগারে যাওয়ার পর প্রথম রাতে থাকতে হয় আমদানি ঘরে। বড়সড় একটা ঘর। ৫০/৬০ জন মানুষ থাকার যায়গা। কিন্তু বাস্তবে ঐখানে থাকতে হয় ২০০ থেকে ২৫০ মানুষ। শরীর নাড়াচাড়া করার কোনো সুযোগ নেই। বাথরুম মাত্র ৩ টা। বাথরুমের পাশে যাদের থাকতে হয় তাদের অবস্থা বর্ণনা করার মত নয়।

প্রতিদিন সকালে গোসলের সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু পানি! সেতো সোনার হরিণের মতো। মানুষগুলোর মুখে অস্রাব্য ভাষা। মনে হয় নরকে চলে এসেছি। ঘোষ ছাড়া একটা পাতাও নড়ে না কারাগারে! কারাগারে নেওয়ার একটা উদ্দেশ্য হলো সংশোধন। কিন্তু বাস্তবে এরকম কিছুই নেই বরং ভালো মানুষগুলোও খারাপ হওয়ার যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে!  প্রতিদিন ১ বার নাস্তা ও ২ বার খাবার দেওয়া হয়। যা অত্যন্ত নিম্নমানের। নেই কয়েদিদের জন্য সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা। ঘোষ দিয়ে অবাদে চলে মাদক গ্রহণ। সিগারেট তো জেলে বেশ কমন হয়ে গেছে। এছাড়াও হাজতিরা কোনোরকম যোগাযোগ করতে পারেন না পরিবারের সাথে। অনেককেই দেখলাম সাজা শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘদিন পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় জেলে থাকতে হচ্ছে। ওয়ার্ডগুলোর পরিবেশ স্বাস্থ্যকর নয়। কারাগারে গেলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যান। চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও দুর্নীতি! ঘোষ দিলে মোটামুটি চিকিৎসা পাবেন আর না হলে নামেমাত্র চিকিৎসা! সবার পক্ষে ঘোষ দিয়ে চিকিৎসা নেওয়া বা বিভিন্ন সুবিধা নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে থাকতে হয় অত্যন্ত কষ্টে।

কারাগারের সামনের স্লোগানের সাথে ভিতরের কোনো মিল দেখতে পাওয়া যায় না। প্রতিটি মুহূর্তেই লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবতা। এর পরিত্রাণ প্রয়োজন। হাজতিদেরকে সংশোধন ও সুস্থ বিনোদন দিতে পারলে অপরাধ দ্রুত কমে যাবে। দুর্নীতি নয় সংশোধনই হোক কারাগারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।