সংসদ ও বিচার বিভাগ মুখোমুখি নয়: আইনমন্ত্রী

0
749
blank

ঢাকা: সংসদের হাতে সুপ্রিমকোর্ট বিচারকদের অপসারণ নিয়ে সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে সংসদ ও বিচার বিভাগ মুখোমুখি হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। রায়ের পর সংসদ সদস্যদের বক্তব্য আবেগের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন তিনি। রবিবার রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাব-রেজিস্ট্রারদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এ রকম সমস্যা এ রকম বিতর্ক রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে হয়। এটা স্বাভাবিক। কিছু কিছু সময় আবেগও কাজ করে। সংসদ সদস্যরা যেহেতু আইন প্রণয়ন করেন, আর বিচার বিভাগ সেটা বাস্তবায়ন করে। তাই সংসদ সদস্যরা কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সুতরাং আইনসভা ও বিচার বিভাগ মুখোমুখি আমি সেটা গ্রহণ করতে রাজি নই।

তবে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যে সেদিন আবেগের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা সকলেই মানুষ। সুতরাং এই রায়ের পর আবেগের কিছু প্রকাশ সংসদের মধ্যে হয়েছিল। সেটা যখন প্রকাশিত হয়েছে, নিশ্চয়ই কিছু কিছু কথা হয়তো কাউকে আঘাত করতে পারে। তবে তাতে এটা বুঝায় না যে, বিচার বিভাগ আর আইনসভা সংঘাতের মুখোমুখি।

যেটুকু বিতর্ক হয়েছে তা সেটা নিরসনযোগ্য উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, আমাদের সমস্যা আমরা নিজেরা নিরসন করতে পারি। দেশের বিচার বিভাগ এবং আইনসভা মিলেই তবে সেটা নিরসন করা যায়। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি না এই রায় এবং তার পর সংসদে যে বিতর্ক হয়েছে সেটা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।

সেদিন সংসদে নিজের দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, মামলাটি শুনানির সময় সরকার পক্ষের সাবমিশনের (শুনানি) মধ্যে ব্যাপারটা বলা হয়েছিল, যেহেতু মূল সংবিধান যেটি ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদ অনুমোদন দিয়েছিল; সেই সংবিধানের মধ্যে এই বিধানটা ছিল। যা কোনোরকম পরিবর্তন না করে হুবহু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পরে ১৯৭৭-৭৮ এ মার্শাল ল’ এর মাধ্যমে সেটা পরিবর্তন করা হয়। সেই বিধানটিই (ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে) পরিবর্তন করা হয়েছে।

‘সে ক্ষেত্রে একটা সিদ্ধ আইনী তর্ক আছে যে, যদি মূল সংবিধান সবরকম বিচারিক পর্যালোচনার উর্ধ্বে। এটা একটা যুক্তি, সেই কথাটাই আমি সংসদে বলেছিলাম। যেহেতু আমি আইনের মধ্যেই ছিলাম, সেহেতু এতে আদালত অবমাননা হয়নি। তাছাড়া সংসদের ভেতরে যা কথা বলা হয় সেটা আদালত অবমাননার এখতিয়ারের মধ্যে আনা যায় না,-’ যোগ করেন আইনমন্ত্রী।

তবে সংসদের ভেতরের বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয় না, এই যুক্তিতে অবমননাকর কথা বলা হয় নাই বলেও দাবি তার। কারণ সেদিনই বিচারকদের বেতনভাতা সংক্রান্ত আইনটি সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী। তাই নিজে আবেগতাড়িত ছিলেন না, উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, আমি কিন্তু সেদিন সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) আইন সংসদে উত্থাপন করেছি। আমার যদি আবেগ থাকতো, তাহলে কি আমি এভাবে কাজ করতাম? দেশটা আমাদের সকলের। দেশের প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান আমি শ্রদ্ধা করি।