ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর স্ত্রী একদিন না পারতে আমাকে বলেই ফেলল, ‘তোমার বৈবাহিক জীবনে কোনো সমস্যা হচ্ছে?’ আমি খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হঠাৎ এই কথা কেন?’
বন্ধুপত্নীর সরল স্বীকারোক্তি, ‘তোমার ফেসবুক প্রোফাইলে শুধু তোমার ছবি কেন?’ এ কথা শুনে প্রথমে অনেক হেসেছি। তবে পরে ব্যাপারটা অবশ্য ভাবিয়েছে। ফেসবুক কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জীবনে, কতটা প্রভাব ফেলেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে?
ফেসবুক নামের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন অনেকটাই আমাদের অনলাইন ব্যক্তিসত্তা। বাস্তব জীবনের মতো সে জীবনের কথাও মাথায় রাখতে হয়। অনলাইনের ভার্চ্যুয়াল জীবনে একজনের আচরণ দেখে তার ‘আসল’ জীবন সম্পর্কে মানুষ ধারণা করে নিচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের গভীরতা ফেসবুক প্রোফাইলের হাস্যোজ্জ্বল ফিল্টার দেওয়া প্রোফাইল পিকচার দিয়ে যাচাই করা খুবই কঠিন। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওয়েবসাইটগুলোই অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভিত নষ্ট করে দিচ্ছে।
আরেকটা ঘটনার কথা বলি। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম, ‘সুন্দরী মেয়েদের ছবি দেওয়া ফেক (ভুয়া) প্রোফাইল থেকে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে লাভ নেই, আমার বউ আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানে।’
স্ট্যাটাসটা একেবারে মজা করেই দেওয়া। আর আমার পাসওয়ার্ড একেবারে সুরক্ষিত। কিন্তু অনেকেই আমাকে ইনবক্সে জানালেন, তাঁদের স্ত্রীও পাসওয়ার্ড জানে এবং তাঁদের অবর্তমানে চেক করে। এটা স্বামীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পারস্পরিক বিশ্বাস ফেসবুক পাসওয়ার্ড আর মেসেজ পড়ার মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ। তবে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাইটগুলোর জন্য সম্পর্ক বেশি ভাঙছে, এটা আমি মানতে নারাজ।
যখন ইন্টারনেট ছিল না তখনো বিশ্বাস ভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে মাধ্যমের সরাসরি কোনো প্রভাব নেই। সঙ্গীকে বিশ্বাস করলে নিঃশর্তভাবেই করা উচিত। এটি শুধু বিশ্বাস করা নয়, জীবনসঙ্গীকে সম্মান করাও। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই এই বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে। পাসওয়ার্ড জানার চেয়ে জরুরি নিজের সঙ্গীকে ভালোভাবে চেনা ও জানা!
এখন যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করছে, আগে এই চাবি ছিল টেলিভিশন আর সিনেমার হাতে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে নাটক সিনেমায় বেশির ভাগ সময় দেখানো হতো, নারীদের চাকরি মানেই সেক্রেটারির কাজ এবং অবধারিতভাবে ‘বস–এর লালসার শিকারে পরিণত হওয়া। যদিও এই ধারণা থেকে আমরা অনেকটাই বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু পুরোপুরি না।
নারীদের চাকরির ব্যাপারটা পরিবারে এখনো অনেকটা বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবেই দেখা হয়। পেশা হিসেবে নয়। সিঁড়ি বেয়ে খুব বেশি ওপরে ওঠার দরকার নেই। খারাপ কী—সংসারে কিছু অর্থ যোগ হচ্ছে।
সংসারে দায়িত্ব ও অধিকারটা সমান হওয়া উচিত। নারী–পুরুষ দুজনেরই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা খুব জরুরি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সন্তান লালনপালনের চাপটা শুধু মায়ের ওপরই থাকে। ঘরের রান্নাবান্নার দায়িত্বও থাকে আবার অর্থ উপার্জনের দায়িত্বের মূল চাপ পুরুষদের ওপরই। অথচ নারী-পুরুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চাকরি—সব ক্ষেত্রেই লড়াই করছেন সমানে সমান।
‘আমার স্ত্রী গৃহিণী’ এই কথা বলার মধ্যে কোনো গ্লানি নেই, কিন্তু ‘আমার স্বামী কিছু করেন না বা উনি সংসার সামলান’ আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় এই কথাটা বলতে যেকোনো নারী সংকোচ বোধ করবেন। এদিক থেকে নারীরা নিজেদের কিছুটা ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। এসব ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপড়া খুব জরুরি।
ফেসবুকে একটা ছবি প্রায়ই দেখা যায়। ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ আর তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান একসঙ্গে খাবার তৈরি করছেন। সেই ছবি নিয়ে মিমও কম তৈরি হয়নি। একটা মিমে এমন লেখা—ফেসবুক বানিয়ে হাজার হাজার সংসার ভেঙে জাকারবার্গ বউয়ের সঙ্গে রুটি বানায়। দাম্পত্য, তা জাকারবার্গের হোক আর সাধারণ মানুষেরই হোক—স্বামী–স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি হাত বাড়ানোটা জরুরি। ঘরের কাজ নারীর, বাইরের কাজ পুরুষের—এ ধারণাকে বিদায় বলতে হবে।
বিবাহিত জীবনকে যদি একটা খেলার সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে এই খেলায় আপনি জিতলে শুধু আপনার সঙ্গী হারবে না, সঙ্গে আপনিও হেরে যাবেন। জয়ী হবেন যখন আপনার সঙ্গীও জিতবেন। লক্ষ্য জয় বা পরাজয়ের না, সমতার...পথচলাটা এগিয়ে যাবার নয়, সঙ্গে চলার।
[সূত্র: প্রথমআলো]
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.