সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঢাকায়, কম সিলেটে

0
1129
blank

রুদ্র মিজান: আতঙ্কের নাম অগ্নিকাণ্ড। আগুন কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন। দগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আবাসিক এলাকায় আগুনে বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এ দেশে অগ্নিকাণ্ডের সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে ঢাকা। নিমতলী, চুড়িহাট্টা থেকে সর্বশেষ বনানীর ভয়াবহ অগ্নিকান্ড কেড়ে নিয়েছে অনেক মানুষের জীবন। পুরান ঢাকা থেকে ঢাকার অভিজাত এলাকা।

কোথাও নিরাপদ নেই মানুষ। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে ঢাকায়। সব চেয়ে কম অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে সিলেটে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুসারে বছরে অগ্নিকান্ডে শত শত মানুষ নিহত হচ্ছেন। ক্ষতি হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকার। প্রকৃতপক্ষে আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহতের সংখ্যা অনেক। বছরে নিহতের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, যেখানে ফায়ার সার্ভিসের সম্পৃক্ততা নেই বা দগ্ধ হওয়ার পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাদের পরিসংখ্যান নেই ফায়ার সার্ভিসের কাছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, দেশে প্রতি বছর অগ্নিকান্ডের শিকার হচ্ছেন ৫-৬ লাখ মানুষ। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ। বছরে অগ্নিকান্ডে মারা যাচ্ছেন, প্রায় ১০ হাজার মানুষ।

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ২ লাখ ৮ হাজার ৬শ’ ৮১টি। নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৯শ’ ৭০ জন। এরমধ্যে গত পাঁচ বছরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ৮৯ হাজার ৯শ’২৩ টি। এতে নিহত হয়েছেন, ৩৬৫ জন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে শুধু ঢাকাতেই দুটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত হয়েছেন ৯৭ জন।

২০১৮ সালে সারা দেশে ১৯ হাজার ৬৪২টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই ঘটেছে ৬ হাজার ২শ’ ৮টি। এছাড়া রংপুরে ৩ হাজার ৪শ’ একটি, চট্টগ্রামে ২ হাজার ৬শ’ ১৪টি, রাজশাহীতে ২ হাজার ২শ’ ৮২টি, খুলনায় ২ হাজার ২শ’ ২৩টি, ময়মনসিংহে ১ হাজার ৪শ’ ১০টি, বরিশালে ৮শ’ ৩৬টি ও সিলেটে ৬শ’ ৬৮টি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ জানান, ঢাকা শহরের ভবনগুলো নির্মাণের শুরুতেই নানা ভুল করা হয়। ভুলের মধ্য দিয়ে গড়া উঠার কারণে অগ্নিকান্ড ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিপুল প্রাণহানি ঘটে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে ডিজাইন ভুল, ভুল পরিকল্পনা থাকে ভবন নির্মাণে। প্রায় প্রতিটি ভবনের ক্ষেত্রে দেখা যায় সিভিল, মেকানিক্যাল, ফায়ার, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জনিয়ার কাজ করে থাকেন। কিন্তু কারও সঙ্গে কারও সমন্বয় থাকে না। ডিজাইন হয়। কিন্তু কেউ তদারকি করে না। এসব ভুলের খেসারত দিতে হয় অগ্নিকান্ডের মধ্য দিয়ে।

বনানীর এফ.আর টাওয়ারের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এরকম একটা সু্‌উচ্চ ভবনে স্টিয়ার থাকবে। পুরো স্মোক, হিট ফ্রি থাকবে। অগ্নিকান্ড হলে সেটা দিয়ে মানুষ নিরাপদে বের হবে। ৩০ মিনিট ফায়ার ফাইটিং সক্ষমতা থাকতে হবে ভবন কর্তৃপক্ষের। একটা অগ্নিনির্বাপন নিজস্ব দল থাকতে হবে। পানি থাকতে হবে। কিন্তু তা আছে কি? প্রশ্ন করেন তিনি।

তিনি বলেন, ২৮শে মার্চ দুপুর সাড়ে ১২ টায় এফ.আর টাওয়ারে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয় ১২টা ৫৫ মিনিটে। ঘটনাস্থলে যেতে লাগে ১০ মিনিট। প্রায় ৪০ মিনিট ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো লোক ছিল না। এতে আগুন বেড়েছে দ্রুত। ১টা ৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পৌঁছে দেখে পুরো তিনটা ফ্লোরে আগুন জ্বলছে। যেখানে তাপমাত্রা ছিলো দুই হাজার ডিগ্রির ওপরে। এরমধ্যেই ফায়ার ফাইট করতে হয়েছে।

মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, ভবনে পাঞ্চিং সিস্টেম, লক ছিলো। এমনকি কেচি গেইট আটকানো ছিলো। এগুলো কেটে কেটে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কাজ করতে হয়েছে। ভবন জুড়ে থাই গ্লাস ছিলো। ধোঁয়া বের হতে পারেনি। পুরোটা যেন একটা মৃত্যুকূপ! এফ.আর টাওয়ারে সহস্রাধিক লোক সমাগম হয়। এরকম একটা ভবনে তিন থেকে চারটা সিঁড়ি থাকার কথা ছিলো। সিঁড়ি ছিলো মাত্র দুটি। একটি সিঁড়ি এক মিটার। যা কমপক্ষে এক মিটার পাঁচ পয়েন্ট হওয়ার কথা। আরও একটা সিঁড়ি ছিলো এক মিটার। ফায়ার এক্সিট বানিয়েছে ২০ ইঞ্চি। এটা দিয়ে একজন মোটা লোকের পক্ষে বের হওয়া সম্ভব না। আট তলায় এটা আবার বন্ধ করে রুম বানিয়েছে। তিনি বলেন, কেমিক্যাল কারখানা, গোডাউন আবাসিক এলাকা থেকে সরাতে হবে। চুড়িহাট্টা ও বনানীর এই ভবনের অগ্নিকান্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই অগ্নিকান্ড থেকে প্রাণ রক্ষা করা সহজ হবে বলে জানান তিনি।

[মানবজমিন]