সমাজে শান্তি ফেরাতে হলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে

0
1508
blank
blank

শিব্বির আহমদ ওসমানী : মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সকলেই একসাথে বসবাস করে। শান্তিময় জীবন-যাপনের জন্য মানুষ সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যায়। কোনো মানুষের শরিরে ভালো মন্দ লিখা থাকে না। তার আচরণে ও কাজকর্মে ভালোমন্দ বিচার করা হয়। খারাপ লোকেরা যখন বুঝে অন্যায় করলে কেউ প্রতিবাদ করবে না, তখন সে অন্যায় করার সাহস পায়। সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে আমাদেরকে প্রতিবাদী হতে হবে। আমাদেরকে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।

সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার বিকল্প নেই। একটা সমাজে অপরাধ তখনই বেড়ে যায়, যখন অপরাধী বারবার অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। তাই মহান আল্লাহ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! ন্যায়বিচারে তোমরা অটল থেকো, আল্লাহর পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীরূপে যদিও নিজেদের প্রতিকূলে যায় অথবা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের, সে ধনী বা গরিব হোক, আল্লাহই উভয়ের জন্য উত্তম অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে নিজ নিজ খেয়ালখুশির (পক্ষপাতিত্বের) বশীভূত হয়ো না।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ১৩৫)

সাধ্যমতো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রতিটি মানুষের ঈমানি দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের সামনে যদি কোনো অন্যায় হয় তখন যেন হাত দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করে অন্যায়কারীকে প্রতিরোধ করে, যদি তা করতে না পারে তবে যেন মুখ দিয়ে প্রতিহত করে। যদি সে মুখ দিয়েও না পারে তাহলে যেন সে অন্তর দিয়ে ঘৃণা পোষণ করে; আর এটাই দুর্বল ঈমানের পরিচয়।’ (বুখারি)

সময়মতো যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা না হয়, তাহলে এর ফল গোটা জাতিকে ভোগ করতে হয়। তাই সমাজে কোনো অন্যায়-অনাচার দেখা দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করা আবশ্যক। কিন্তু আমাদের সমাজে এখন আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে অনেকে আগ্রহ দেখায় না। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া হাজারো অন্যায়কে ঠাণ্ডা মাথায় এড়িয়ে চলে। অন্যায়ের প্রতিবাদকে তারা অযথা ঝামেলায় জড়ানোই মনে করে। এতে মানুষ নিজেদের অজান্তেই গোটা জাতির ওপর আরো বড় বিপদ ডেকে আনে।

এমন সব ভালো মানুষ যারা অন্যায় দেখার পরেও কোনো প্রতিবাদ করে না মূলত তাদের কারণেই পৃথিবীতে গজব আসে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষ যখন কোনো অত্যাচারীকে দেখেও অন্যায় থেকে তার হাতকে প্রতিরোধ করবে না, শিগগিরই আল্লাহ তাদের সবার ওপর ব্যাপক আজাব নাজিল করবেন।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)

মহান আল্লাহ তায়ালা অন্যায়ের প্রতিবাদ করার পাশাপাশি মানুষকে সৎকাজে আদেশ করার প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণে তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ করতে নিষেধ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে। তাই আমাদেরকেই সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জাগতে হবে৷ আমাদের সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে সম্মিলিতভাবে আমাদেরকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। আসুন, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা ভালো কাজের প্রসংশা করি আর অন্যায় কাজকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করি।

লেখক : শিক্ষক, সাংবাদিক ও উদ্যোক্তা।

fb.com/ShibbirAOsmani