সম্মেলন ঘিরে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ

0
937
blank
blank

নিউজ ডেস্ক: নৌকার আদলে গড়া বিশাল মঞ্চ নির্মাণের একেবারে শেষ প্রস্তুতি চলছে। পেরেক ঠোকার পাশাপাশি কখনো কখনো নির্মাণশ্রমিকেরা খোশগল্পেও মেতে উঠছেন। সিলিং ফ্যান লাগানো, শামিয়ানা টাঙানোসহ প্যান্ডেলের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আজকাল বাদেই শুরু হবে আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২০তম জাতীয় সম্মেলন। সেই লক্ষ্যে তদারকির কাজও চলছে জোরেশোরে। মঞ্চের পাশেই অস্থায়ী ক্যাম্পসহ গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনো গোল হয়ে আবার কোথাও জটলা পাকিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সম্মেলন ঘিরে তারা উজ্জীবিত। গতকাল বুধবার দলটির সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে এ রকম চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো। শুধু রাজধানীতে নয়, সম্মেলন ঘিরে প্রতিটি জেলা উপজেলায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রতিটি মহানগর, জেলা-উপজেলা ও শহরের মোড়ে মোড়ে টাঙানো হয়েছে দলটির ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে ব্যানার ফেস্টুন এবং বিশেষ স্পটে তৈরি করা হয়েছে তোরণ। তবে প্রচারকারীর ছবি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নিজেদের মেলে ধরতে নেতাকর্মীরা নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি সংবলিত ফেস্টুন টাঙিয়ে দিয়েছেন নেতারা। শুধু ব্যানার ফেস্টুনের একেবারে নিচেই সংগঠন বা প্রচারকারীর নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও জাতীয় চার নেতা, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামালসহ আওয়ামী লীগের প্রবীণ বেশ কিছু নেতার নাম ফেস্টুনে স্থান পেয়েছে।

নেতারা বলছেন, সকাল হলেই রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে দলবেঁধে নেতাকর্মীরা ছুটে আসছেন সম্মেলনস্থলে সেখানে তারা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। আর কেন্দ্রীয় নেতারা এসে সম্মেলনের মাঠ পরিদর্শন করছেন, মঞ্চের কাজ, প্যান্ডেলসহ সব প্রস্তুতি ঠিকঠাক মতো করার সার্বিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। গতকাল সম্মেলনের মাঠ পরিদর্শন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দুপুরে পরিদর্শন করেন সম্মেলনের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সদস্যসচিব মির্জা আজম। এরপরই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো: আবু কাউছার শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে বিশাল শোডাউন করেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহম্মদ মহি, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হুসাইন পৃথকভাবে ছাত্রলীগের কয়েক শ’ নেতাকর্মী নিয়ে মাঠে শোডাউন দেন। মঞ্চের পাশে শৃঙ্খলা উপকমিটির অস্থায়ী ক্যাম্পে সকাল থেকে রাত অবধি শৃঙ্খলা সম্পর্কিত কাজ নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটো ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ব্যস্ত সময় কাটান।

নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০তম জাতীয় সম্মেলন হবে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, এবারের সম্মেলন হবে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন। এ সম্মেলন সফল হওয়ার মধ্য দিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, আমরা মনে করি এই সম্মেলন ঘিরে একটি জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি সংবলিত ব্যানার ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। সম্মেলন উপলক্ষে কোথাও বিশাল তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে, আবার কোথাও তোরণ নির্মাণের কাজ চলছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করার আগে ডান ও বাম পাশের রাস্তায় এবং রাস্তার মাঝখানে ওপরে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ভোলার লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি, হাজী মো: সেলিম এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী শিরীন নাঈম পুনম এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের  সহসভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুন্নাহার বেগম ও প্রচার সম্পাদক নাজনীন আক্তার স্বর্ণা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র আলহাজ সাঈদ খোকন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমদ রতনসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা নিজের নাম ব্যবহার করে ফেস্টুন টাঙিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি রয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগও এই তিনজনের ছবি দিয়ে বেশ কিছু ফেস্টুন টাঙিয়েছে। এ ছাড়া মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটি সরকারের সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দর্শনীয় কিছু ফেস্টুন টাঙিয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ রঙ-বেরঙের ফেস্টুন দিয়ে লাইটিং করে এলাকা সাজিয়েছে। ধলপুর-যাত্রাবাড়ী রোডের প্রবেশপথে বিশাল তোরণ নির্মাণের কাজ চলছে। এ প্রসঙ্গে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০তম জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে সর্বাত্মক প্রচার চালানোর জন্য নেতাকর্মীরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে কাজ করছেন। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, খাদ্য উপকমিটির একটি বুথের দায়িত্ব পেয়েছে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ। এই দায়িত্ব আমরা যথাযথভাবে পালন করব, ইনশাল্লাহ।