সরকার জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আন্তরিক নয়: মির্জা ফখরুল

0
1044
blank

ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার সত্যিকার অর্থে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আন্তরিক নয়। বরং এই ইস্যু থেকে ক্ষমতাসীনরা ফায়দা নিতে চায়। সরকারই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় ও লালন করছে মন্তব্য করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি। সোমবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘সাগর-রুনি’ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। বিএনপির ‘হিউম্যান রাইটস সেল’ প্রকাশিত ‘ফাইটিং মিলিট্যানসি ইন কোয়েস্ট অফ পিস’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মেচনের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেখানে গণতন্ত্র থাকবে না সেখানে টেররিজম, উগ্রবাদ,জঙ্গিবাদের জন্ম হবে এবং সেটা আরো বিকশিত হবে। এটিই আসল কথা। এই কথাটি আমরা বারবার বলার চেষ্টা করেছি। এই টেররিজম মোকাবেলা করার জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই কোনো দলের নয়, কোনো ব্যক্তির নয়, কোনো গোষ্ঠীর নয়। সমগ্র জাতিকে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমরা সব ধরনের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সব ধরনের টেরোরিজমের আমরা বিরুদ্ধে। সরকারকে আহবান জানাচ্ছি, মানুষকে বোকা বানানোর জন্য, মানুষকে প্রতারণা না করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন।
পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে বলব, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিন, যাতে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, মুখ খুলে কথা বলতে পারে এবং তার গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো প্রয়োগ করতে পারে।
গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজন জঙ্গিদের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি ঘটনাতেও যাদেরকে সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কেউ বেঁচে নেই। প্রত্যেককেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হয় ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে অথবা পালাচ্ছিল অথবা পাল্টা আক্রমণ করেছিলো বলে হত্যা করা হয়েছে। একটি না, আপনি একজনকেও বের করতে পারবেন না। সম্প্রতি র্যােব কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে, ২টা না ১টা। তাদেরকে ধরে বলছে যে এরা পরিকল্পনা করছিলো। এখন যে অবস্থা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, কয়েকদিন আগে দেখলাম পত্রিকায়, ২৮ জন মহিলা তারা একটি বাসায় সম্ভবত তাবলীগের মহিলা ওই সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, সেখানে তাদেরকে নিয়ে গিয়ে বলা হচ্ছে- নাশকতার পরিকল্পনা করছিলো। সরকার এখান থেকে ফায়দা নিতে চায়- যে কথা আমরা বার বার বলছি।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, সত্যিকার অর্থেই জঙ্গিবাদকে নির্মূল কবার জন্য যদি আপনারা আন্তরিক হন, তাহলে এর সুষ্ঠু তদন্ত করুন এবং যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করুন। যে কাজটি বিএনপি করেছিলো ২০০৫-০৬ সালে সেই বাংলা ভাই সমস্যার সময়ে। আপনারা যেটা করছেন না। রাজনৈতিক ফায়দা নিতে সুবিধা হয়- আপনারা ইচ্ছাকৃতভাবে সেকাজ করছেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আজকে জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এই বিষয়টা যাতে তারা না করতে পারে, সেজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে। এর একটি মাত্র পথ হচ্ছে সমগ্র জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে, তাদেরকে সচেতন করে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
আমরা সবসময় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি শুধু নয়, আমরা ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ২০০৫ সালে আমরা প্রমাণিত করেছি, আমাদের সরকার তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছিলো।
বর্তমান সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ বেড়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আপনাদের আমলে দেখা যায় যে, নতুন নতুন জঙ্গি সংগঠন সৃষ্টি হচ্ছে, আপনাদের আমলে দেখা যায় যে, ব্লগাররা নিহত হচ্ছে, প্রকাশকরা নিহত হচ্ছে। এর কারণটা কি? আপনারা ওদের প্রশ্রয় দেন, আপনারা তাদের লালন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সেলিমা রহমান, শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, দলের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।