সরকার বিএনপিকে জঙ্গি সংগঠন বানানোর ষড়যন্ত্র করছে: রিজভী

0
460
blank

ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জঙ্গি দমনে ব্যর্থ হয়ে সরকার এখন প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই বিএনপিকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তদন্তে জঙ্গি নথিতে স্থান পাওয়া ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এম এ কাইয়ুমকে জড়ানোর চেষ্টা করছে।

আজ সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদদের বক্তব্য ও ঘটনার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য প্রমাণ করে শুধু রাজনৈতিক কারণে বিএনপির নিরপরাধ নেতাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে সরকার। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সংবাদ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে গুলি করে হত্যা করা হয় নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক একটি এনজিও’র কর্মকর্তা ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজারকে (৫১)। ঘটনার পরপর জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হত্যার দায় স্বীকার করে। পরে আইএস এর নিজস্ব সাময়িকী দাবিক-এর নভেম্বর সংখ্যায় একটি নিবন্ধে দাবি করা হয়-আইএস এর একটি সিকিউরিটি সেল ঢাকায় তাবেলা সিজারকে চিহ্নিত করে হত্যা করেছে।

রিজভী বলেন, ওই ঘটনার পাঁচ দিন পর আইএস সদস্যরা রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হুসিকে হত্যা করে বলে দাবি করা হয়। আর বিভিন্ন সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়-জাপানি নাগরিক হত্যা সহ আইএস এর দাবি করা অন্যসব ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে দেশীয় জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) জড়িত। ওই সময়ে প্রাথমিকভাবে জঙ্গিদের দায় স্বীকার করা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবির পরও প্রায় এক মাসে প্রকৃত অপরাধীদের বের করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। ফলে দেশব্যাপী এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের ব্যর্থতা পরিস্কার হতে থাকে। ঠিক তখনই বিএনপিকে এ ঘটনায় জড়ানোর পরিকল্পনা করে ক্ষমতাসীনরা। এরই অংশ হিসেবে গত ২৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আসামী হিসেবে চারজনকে হাতকড়া পরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। পাশাপাশি হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও উপস্থাপন করা হয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই মন্ত্রীদের বিভিন্ন বক্তব্যে দেশব্যাপী সমালোচনা তৈরি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুর বদল করতে বাধ্য হয়ে বলেন-বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম এই হত্যাকান্ডে সন্দেহভাজনের তালিকায় আছেন। সে সময় ক্ষমতাসীনরা সুর বদল করলেও চক্রান্ত বদল করেননি। তার বহি:প্রকাশ দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলোতে।

রিজভী বলেন, বিএনপির আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত কাইয়ুমকেই ফাঁসানো হয় কী না। মামলাটি সাজানোর বিষয়টি ইঙ্গিত পেয়ে বারবার এটি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন এসেছে। সাজানোর বিষয়টি সেই সময়ে উপলব্ধি করা যায় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলের রিপোর্টে। তিনি বলেন, তদন্তের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, আসামী এবং জব্দকৃত আলামত ও আসামীদের ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জবানবন্দী আদায় ও স্বজনদের বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় যে, শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশেই মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে এম এ কাইয়ুমের ওপর। উদ্দেশ্য বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করা। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি নিরপরাধ ব্যক্তিকে ফাঁসানোর হীন ষড়যন্ত্র থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।