সরকার মারাত্মক রাজনৈতিক অপরাধ করেছে: ব্যারিস্টার মওদুদ

0
816
blank

ঢাকা: সরকার জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে মারাত্মক রাজনৈতিক অপরাধ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’- শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।

মওদুদ আহমদ বলেন, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও দেশে আজ গণতন্ত্র ও রাজনীতি নেই। এর চেয়ে বড় বিষাদময় ঘটনা আর কী হতে পারে? পঁচাত্তর সালে সংবিধান থেকে গণতন্ত্র পুরোপুরি তুলে নিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। বর্তমানে সংবিধানে গণতন্ত্র আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই। আগে গণতন্ত্র তুলে নিয়ে একদলীয় শাসন আর এখন গণতন্ত্রের কথা সংবিধানে রেখে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য আরো বেশি ভয়াবহ। কারণ, কাগজে-কলমে গণতন্ত্র আছে অথচ বাস্তবে তা নেই। ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনে পাঁচ কোটি ভোটারের প্রয়োজন পড়েনি। ১৫৩টি আসনে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এই সরকার জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে মারাত্মক রাজনৈতিক অপরাধ করেছে। এর চেয়ে বড় রাজনৈতিক অপরাধ আর হতে পারে না। আজকে মন্ত্রিসভার সবাই অনির্বাচিত। এই সরকার শুধু সংসদকেই দুর্বল ও অকার্যকর করেনি, সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকেই তারা ধ্বংস করেছে। আর এইভাবে দেশ চলছে। সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, এই নির্বাচনে ১৩২ জন মানুষেল প্রাণ গেলো, হাজার হাজার লোক আহত হলো। এদের ৯৫ শতাংশই আওয়ামী লীগেরই। তাহলে এই নির্বাচনের দরকারটা কী ছিল? নির্বাচন ও গণতন্ত্র আজ সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। আজ বাস্তবে কোনো স্বাধীনতা নেই, যা দেশের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।

জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, দেশে গণতন্ত্র না থাকায় জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের উত্থান হচ্ছে। আমরা জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদকে ঘৃণা করি। মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, খ্রিস্টান ধর্মযাজকসহ ইতোমধ্যে ২৭টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই সরকার এখন পর্যন্ত একটি ঘটনারও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। অথচ সরকার নাকি জঙ্গিবাদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে। কিন্তু তাদের কাজ-কর্মে সেটা দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং বলা যায়, জঙ্গি দমনে সরকারের সততার অভাব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সরকারের একার পক্ষে পুলিশ ও র‌্যাব দিয়ে জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ দমন করা সম্ভব নয়। কারণ, র‌্যাব-পুলিশের জনবল সীমিত। এটা কেবল গণতান্ত্রিক অংশিদারিত্বমূলক সরকারের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু বর্তমান সরকার অংশীদারিত্বমূলক নয়। জঙ্গিবাদ দমনে সরকারকে একটি প্লাটফর্ম তৈরির আহ্বান জানিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, জঙ্গিবাদ দমন করতে হলে সরকারকে দু’টি কাজ করতে হবে। একটি হলো- জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা, দ্বিতীয়টি হলো-জাতীয় ঐক্যের প্লাটফর্ম তৈরি করা। এটি করতে পারলে বিএনপিও সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন-বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএসপিপির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম সেলিম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নেতা ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।