সর্বস্তরে জনগণের ঐক্য মুক্তি দিতে পারে: ড. কামাল

0
519
blank
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনো রাজনৈতিক দলের ঐক্যের চেয়ে সর্বস্তরের জনগণের ঐক্য বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম, রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন ও আমাদের স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণই এদেশের মালিক। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র বেদখল হয়ে গেছে। জনগণ এখন পরিরবর্তন চায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসনে যা চলছে- তা থেকে তারা মুক্তি চায়। তবে এ মুক্তির জন্য জনগণেরই ঐক্য দরকার। কোনো রাজনৈতিক দলের ঐক্যের চেয়ে সর্বস্তরে জনগণের ঐক্য এ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

তিনি বলেন, দেশে কোটি টাকা দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ করতে হবে। কোটি টাকার গণতন্ত্র জনগণ চায় না। নির্বাচনকালীন সরকার প্রধানকে সকল রাজনৈতিক দলের আস্থাভাজন হতে হবে।

আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন গণফোরাম নেতা আওম শফি উল্লাহ। এতে তিনি বলেন, নির্বাচনে সকল দলের সুযোগের সমতা থাকতে হবে। একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তীব্র আকাঙ্ক্ষা জনমনে এখনও প্রত্যাশিত। আশা করি সরকার সকল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হবেন।

এ সময় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য সুনিদিষ্ট লক্ষ্য ও কর্মসূচিভিত্তিক জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

শফি উল্লাহ বলেন, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণ তাদের সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। ফলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্বাচনে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে জনগণের পক্ষে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে এটাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক রাজনীতির মুল কথা।

জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, সব ভোদাভেদ ভুলে ঐক্য করতে হবে। দেশের এখন যে অবস্থা তাতে সব দলকে নিয়ে ঐক করতে হবে। কারো ব্যাপারে কোনো ধরনের রিজার্ভেশন থাকলে ঐক্য হবে না। সে ধরনের ঐক্যে তিনি নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র এখন ক্ষতিকর জায়গায় চলে গেছে। যারা এখন সরকারে এটাকে দায়িত্ব না মনে করে ক্ষমতা পেয়েছে বলে মনে করে। এটা খুবই আপত্তিকর। আমরা আর এমন কাউকে ক্ষমতা চাই না, যারা বিরোধী দলকে দমন করবে, সমালোচনা সহ্য করবে না।

সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই ফ্যাসিবাদের দিকে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে পরিণতি ভয়াবহ। তিনি দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির ঐকই পারে এ ধরনের পরিস্তিতি থেকে একটি জাতিকে রক্ষা করতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, জনগণের বুকে লাথি মেরে, গলাটিপে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এ ধরনের নিপীড়ন নির্যাতনকে কারা বলবে যে দেশে গণতন্ত্র আছে? রাষ্ট্র ক্ষমতা জনগণের কাছে নিয়ে আসতে প্রয়োজন আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। তারা একবেলা মাটির থালায় খাবে তবু আত্মমার্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। তারা ভোটারবিহীন গণতন্ত্র চায় না। দুই কোটি টাকার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জেলে যাওয়ার বিষয়টি আমার মন কেনো জানি সমর্থন দেয় না।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণ ফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, ভাষাসৈনিক কর্নেল ডা. আব্দুল লতিফ মল্লিক প্রমুখ।