। ফেসবুকের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অনেকেই অনেক বড় বড় কাজ করেন। বর্তমান সময়ে ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন মুলক কাজের অর্থ সংগ্রহ করা হয়। তেমনি অসহায় রোগীদের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন চেয়ে অনেক সামাজিক সংঘটন অর্থ সংগ্রহ করে অসহায় রোগীর চিকিৎসা করান। বিভিন্ন রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে রক্ত সংগ্রহের সবথেকে বড় মাধ্যম বর্তমানে এই ফেসবুক। এই ফেসবুকের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের একজন সার্জেন্ট এক ভিন্ন ধর্মী কাজ শুরু করেছেন। সিলেট জেলায় কর্মরত এই সার্জেন্ট সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সন্তানদের মাঝে বিনা মুল্যে খাতা-কলম বিতরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। চলতি বছরের ১১মে তিনি এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি দেশ বিদেশে অবস্থানরত বন্ধুদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। তার এই উদ্যোগটি মানুষের মনে প্রসংসা পায় এবং দেশবিদেশের বাংলাদেশিরা এগিয়ে আসেন। তাকে সার্বক্ষণিক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন এর পুলিশ সার্জেন্ট স্বপন তালুকদার এবং আল-হারামাইন হসপিটাল সিলেটের মেডিকেল অফিসার ডাঃ প্রশান্ত তালুকদার। খাতা কলম বিতরনের প্রথম ধাপে তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ১১৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী "রাজানগর কৃষ্ণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়" এর ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে শুরু করেন। ২২০০ কলম এবং ৩৪০০ দিস্তা খাতা প্রায় ৫শত ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব মোস্তফা কামাল আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুল কমিটির সভাপতি রুপালী চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক রাকেশ দাস, ইউনিয়নের প্রবীণ রাজনৈতিক সাদিকুর রহমান। অতিথিরা তরুণদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। এবং সমাজের সকল পেশার মানুষদের তাদের মতো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ছাত্রছত্রীদের উদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন দিকনির্দেশনামুলক বক্তব্য রাখেন। এই কার্যক্রমের উপস্থাপনায় ছিলেন অসীম তালুকদার । এই বিষয়ে সার্জেন্ট ফাহাদ মোহাম্মদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, " আমি হাওর পারের সন্তান। বোরো ফসল এই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র সম্বল। তাই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য কিছু করা কথা ভাবি। তখনই স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু করার কথা মাথায় আসে। সাথে সাথেই এই নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেই। আর তাতেই বিভিন্ন পেশার মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমিও সাহস পাই। এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেককেই আমার এই পরিকল্পনার কথা জানাই। এবং সবাই এক বাক্যে বলেন খুব ভালো উদ্যোগ। এবং তারা সর্বাত্মক সাহায্যের আশ্বাস দেন। " তিনি আরও বলেন, " আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়ত আমি সফল হব না। কিন্তু যাদের সহযোগিতার কথা না বললেই নয় তারা হলেন, ট্রাফিক কনস্টেবল সামছুল আলম তিনি প্রমাণ করেছেন সাহায্য করতে চাইলে র্যাংক বা কোটিপতি হওয়ার প্রয়োজন নাই প্রয়োজন কেবল একটু আন্তরিকতার। তিনি পরিচিত ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করেছেন। আমার বন্ধু সার্জেন্ট স্বপন তালুকদার, সে নিজে তার ইউনিটের সদস্যদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে আমার কাছে তুলে দিয়েছে। এবং বন্ধু ডাক্তার প্রশান্ত তালুকদার যে সব সময় পর্দার আরালে থাকতেই ভালবাসে কিন্তু কাজের বেলায় সবার আগে এগিয়ে আসে। মহৎপ্রাণ মানুষেরা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তাতে করে আমার এই কার্যক্রম আরও স্কুলে পোঁছে দিতে পারবো। রমজান মাসের বন্ধের পরে আবারও আমাদের এই কার্যক্রম শুরু হবে।" সার্জেন্ট ফাহাদ বলেন, " বাংলাদেশে পুলিশিং একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এখান এই চাকরী করে মানব সেবামূলক কাজের সময়টা তেমন পাওয়া যায় না। তবে সারাদিন ডিউটির ফাঁকেফাঁকে আমি মানুষের সাথে যোগাযোগ করি। অনুদান সংগ্রহ করি। এবং বন্ধুদের মাধ্যমে সংগ্রহ করাই। পুলিশের চাকরি করি বলেই বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি। কারণ মানুষ যতই পুলিশকে গালিগালাজ করুক সবাই পুলিশকে ভাল কাজে সহায়তা করে। আমার ইচ্ছা সমাজের অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করা। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও এই কাজ চালিয়ে যাবো " সার্জেন্ট ফাহাদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে দেখা যায় উনার বেশিরভাগ পোস্ট মানববিক আবেদন চেয়ে। অসহায় রোগীর জন্য রক্ত চেয়ে তিনি প্রতিদিনই পোস্ট করেন। এই দেশের মানুষের কাছে পুলিশ মানেই একটি খারাপ চরিত্র। কিন্তু পুলিশও যে সমাজের একটা অংশ তাদেরও মানবিক মূল্যবোধ আছে মানবতার জন্য তাদের মনও যে কাঁদে তা সার্জেন্ট ফাহাদ আবারও প্রমাণ করলেন। আমাদের উচিৎ পুলিশের ভাল কাজের প্রশংসা করা এবং তাদের এই কাজ কে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা যাতে অন্যান্যরাও ভাল কাজে উৎসাহিত হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.