সিলেটের শেখঘাট; সন্ধ্যা হলেই আতঙ্ক

0
1622
blank
blank

ডেস্ক রিপের্ট: আতঙ্কের নাম সিলেটের শেখঘাটের জিতু মিয়ার পয়েন্ট। গত চার দিন ধরে জিতু মিয়ার পয়েন্টে পাল্টাপাল্টি মহড়া চলছে। সন্ধ্যা হলেই আতঙ্ক শুরু হয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। দোকানপাট বন্ধ করে চলে যান তারা। বিবদমান দুই গ্রুপের সশস্ত্র অবস্থানের কারণে উত্তেজনা বিরাজ করছে সেখানে। কাজিরবাজার সেতু হওয়ার পর এই এলাকা এখন সিলেটের অন্যতম প্রবেশ দ্বার। দৃশ্যপট পাল্টেছে। আগের চেয়ে এখানে জনসমাগম বেড়েছে।

দোকানপাট বেড়ে জনাকীর্ণ এলাকা হয়েছে। সন্ধ্যা নামলে একটু প্রশান্তির আশায় নদী তীরবর্তী এই পয়েন্টে চলে যান অনেকেই। খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ান। কিন্তু গত চার দিনের উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে শেখঘাটের ওই পয়েন্টে বিরাজ করছে ভীতির পরিবেশ। ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে জিতু মিয়ার পয়েন্টে আসেন শেখঘাটের বাসিন্দা লতু মিয়ার ছেলে নুরু মিয়া। তিনি নগরীর রিকাবীবাজার যেতে একটি সিএনজি অটোরিকশায় উঠেন। এ সময় চালককে যাওয়ার নির্দেশ দিলে সিএনজি অটোরিকশা চালক যাননি। এ নিয়ে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে নুরু মিয়ার কথা কাটাকাটি হলে গরম দেওয়ানের মাজারের সামনের বাসিন্দা সবুজ, শাকিল সহ কয়েকজন এসে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের পক্ষ নেন। এ সময় তারা নুরু মিয়াকে মারধর করে লামাবাজার ফাড়ি পুলিশের হাতে তুলে দেন। খবর পেয়ে শেখঘাট থেকে জাবেদ আহমদের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক এসে ওই পয়েন্টে গালিগালাজ করে যান। এ সময় তারা লাঠিসোটা দিয়ে মহড়াও দেন। স্থানীয় ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিকন্দর আলীর মধ্যস্ততায় ফাঁড়ি থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন নুরু মিয়াকে।

এদিকে পর দিন মঙ্গলবার দিনভর পয়েন্টের উত্তরপাশে গরম দেওয়ান মাজারের সামনে মহড়া দেয় সবুজসহ ওই এলাকার যুবকরা। তারা পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ওখানে মহড়া দেয়। তবে সন্ধ্যার আগেই তারা মহড়া দিয়ে চলে যায়। রাত ৮টার দিকে হঠাৎ করে শেখঘাটের জাবেদ ও নুরু মিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক যুবক এসে হামলা চালায়। তারা পয়েন্টে থাকা সিতারা বেকারী সহ কয়েকটি দোকানপাটের চেয়ারসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় তারা পয়েন্টের ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লিদের উপর হামলা চালায়। হাতে রামদা, দা থাকায় তাদের ভয়ে অনেকেই চলে যান। তারা ব্যাপক ভাঙচুর করে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে চলে যান। তবে- ঘটনার পরপরই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার মানুষদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় ছুটে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর সিকন্দর আলী ও কাজিরবাজার মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তারা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মুসল্লিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হামলাকারীদের দিয়ে কয়েকজনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করান। বুধবার দিনভর ছিলো শান্ত পরিস্থিতি।

কিন্তু সন্ধ্যা হতেই শুরু হয় উত্তেজনা। গরম দেওয়ানের মাজারের সামনে জড়ো হতে থাকেন যুবকরা। রাত ৮ টার দিকে ৫০ থেকে ৬০ জন সশস্ত্র যুবক আসে পয়েন্টে। এ সময় কয়েক জনের মাথায় হেলমেট ছিলো। হাতে রামদা, দা ও লাঠিসোটা। জিতু মিয়ার পয়েন্টে এসেই তারা ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। শেখঘাটের বাসিন্দারা দাবি করেছেন- সবুজ, শাকিল সহ কয়েক জনের নেতৃত্বে তারা পাল্টা হামলা চালায়। এ সময় তারা শেখঘাট পয়েন্টে থাকা ছাত্রলীগের আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের নেতা সায়েমের দোকান ভাঙচুর করে। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটে। দোকান ভাঙচুরের পর শেখঘাটের বাসিন্দাদের পাল্টা জবাব দিতে তারা পুরাতন পাসপোর্ট অফিস এলাকায় যায়। সেখানে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা নাছির উদ্দিন খানসহ কয়েকজন গণ্যমাণ্য ব্যক্তি বাসা থেকে বেরিয়ে এসে তাদের ফিরিয়ে দেন। এবং বিষয়টি সামাজিক ভাবে নিষ্পত্তি করারও আশ্বাস দেন। ফলে সশস্ত্র যুবকরা ফের জিতু মিয়ার পয়েন্টে এসে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

এ ঘটনার পর থেকে শেখঘাট এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে- রাতে সিলেটের পুলিশ শেখঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায়। রাতেই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিয়া গতকাল বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- পুলিশ দুজনকে আটক করে নিয়ে এসেছিলো। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। সামাজিকভাবে ঘটনাটি শেষ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তারা। সিলেট সিটি করপোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিকন্দর আলী জানিয়েছেন- যে ঘটনা ঘটছে সেটি কোনোভাবে কাম্য নয়। এলাকার মানুষ আতঙ্কে আছেন। আমরা বিষয়টি সামাজিকভাবে নিস্পত্তি করার চেষ্টা করছি। শেখঘাটের মানুষ অতীতে বিভিন্ন ঘটনায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এবার এই ঘটনায় সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- গত ৪-৫ বছরে সিলেটের শেখঘাট খুলিয়াপাড়া ও গরম দেওয়ানের মাজার এলাকায় কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুর স্বামী তাজুল ইসলাম, ছেলে সোহান সহ কয়েকটি আলোচিত হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে শেখঘাটের মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। এই ঘটনা নতুন করে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

[সৌজন্যে: মানবজমিন]