সিলেটে মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে নগরজুড়ে আলোচনা

0
466
blank
blank

সিলেট ব্যুরো: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সক্রিয় হয়ে ওঠায় নগরজুড়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। আগামী বছরের মে মাসের মধ্যেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সিসিকে এবার কারা মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন : তা এখনো স্পষ্ট না হলেও তিনজন রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তারা হচ্ছেন- বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, টানা দুইবারের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও নগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। আরিফ সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। কামরান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। অপর দিকে, জুবায়ের এক সময় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবার প্রতদ্বন্দ্বিতা করবেন। জুবায়ের ইতোমধ্যে দলীয় সমর্থনও লাভ করেছেন।

দলীয় মনোনয়ন লাভে দৃঢ় প্রত্যয়ী বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান উভয়ে নিজ নিজ দলের হাইকমান্ডের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন বলে দাবি করছেন। তবে উভয় দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী তা মানতে নারাজ।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জানান, দলীয় সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তিনি বলেন, আমি আশাবাদী এবারো দলীয় মনোনয়ন পাবো এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবো। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দল। দলের যেকোনো নেতাকর্মীর মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কামরান নেতাকর্মী ও নগরবাসীর সমর্থন পাচ্ছেন দাবি করে বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই আমি মেনে নেবো।

কামরান ছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যতম দুই নেতা হচ্ছেনÑ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও শিাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। আজাদ সিসিকের টানা তিনবারের কাউন্সিলর। আসাদ উদ্দিন আহমদ সিলেট মদন মোহন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি। এতে দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেক দিন থেকে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, গত সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল ঘুরেফিরে একই ব্যক্তিকে বারবার মনোনয়ন দেয়া। তিনি বলেন, মেয়র পদ পুনরুদ্ধারে প্রার্থী পরিবর্তন করা দরকার। আসাদ আরো বলেন, ছাত্রজীবন থেকে কিন ইমেজ রা করে চলেছি। উন্নয়ন ও শান্তির জনপদ গড়তে নগরবাসী আমাকে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন।

আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, তরুণেরা আমাকে মেয়র পদে দেখতে চায়। তারাই আমাকে প্রার্থী হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নগরবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করছি। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ফের দলীয় মনোনয়ন লাভের লক্ষ্যে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ১৪ নভেম্বর রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন আরিফ। তিনি দাবি করেন, ওই সময় বেগম খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনের জন্য তাকে প্রস্তুত হতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আরিফ বলেন, নগরবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তা পূরণে শুরু থেকেই আন্তরিকভাবে কাজ করেছিলেন। তবে, দীর্ঘ দিন কারাবন্দী থাকায় সব কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। এ জন্য আগামী নির্বাচনে তিনি আবারো নগরবাসীর সমর্থন চান।

গত নির্বাচনে অন্যরা আরিফকে ছাড় দিলেও এবার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। তিনি প্রতিদিন গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের বহু নেতাকর্মীও তার সাথে রয়েছেন। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে ওই দলের রাজনীতির সাথে জড়িত সেলিম মেয়র পদে এবার দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। সম্প্রতি সেলিম এক সভার মাধ্যমে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ৩৮ বছর ধরে বিএনপির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কাউন্সিলরদের ভোটে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছি।

সেলিম ছাড়াও সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী আরিফকে ছাড় দিতে নারাজ। নাসিম হোসাইন বলেছেন, তিনি দলের হাইকমান্ডের মত নিয়েই নির্বাচনের ল্েয মাঠে নেমেছেন। সেলিম ও নাসিমকে মাঠে বেশ তৎপর দেখা গেলেও সে তুলনায় কয়েস লোদীর তৎপরতা কম। এ দিকে, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মেয়র পদে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর এবার ফলাফল কী হতে পারে এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সরব আলোচনা চলছে। সিলেট নগরীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মতো জামায়াতেরও বিপুল ভোট রয়েছে। জুবায়ের গত ১৫ নভেম্বর সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির ২ নম্বর বার হলে আইনজীবীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ লালা বলেন, জেলা বারে অ্যাডভোকেট জুবায়েরের মতো সজ্জন, সৎ, যোগ্য ও মেধাবী আইনজীবী পেয়ে সত্যিই আমরা গর্বিত। আমি কোনো দলের রাজনীতি করি না। রাজনৈতিক ব্যাপারে আমি কারো কাছে দায়বদ্ধ নই। অ্যাডভোকেট জুবায়ের মেয়র পদে প্রার্থী হলে দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে আমি সর্বাত্মকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি।

ওই সভায় অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, বার সভাপতিসহ আমার সহকর্মী আইনজীবীরা আমাকে ভালোবেসে যে সাড়া দিয়েছেন, আমি তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর নগর বিনির্মাণের পাশাপাশি ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার পর থেকে তিনি নগরীতে গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন।

এবার সিলেটে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের কোনো আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় ভোটারদের মধ্যেও এ নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াত ছাড়া অন্য দলের অনেকেই এবার প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে চারদলীয় জোট প্রার্থী বিএনপি নেতা এম এ হককে পরাজিত করে মেয়র পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বাচনে কারাগারে বন্দী থেকেও বিপুল ভোটে আবার বিজয়ী হন কামরান। তবে, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে চারদলীয় জোট প্রার্থী বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী বিপুল ভোটে কামরানকে পরাজিত করেন।