সিলেটের হোটেল কক্ষে যুবক-যুবতীকে ঢুকিয়ে জোর করে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেছে ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডাররা। পরে ওই যুবকের ভাইয়ের কাছে ফোন করে ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। হোটেল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ওই ৪ ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডারদের হোটেল কক্ষ থেকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ অশ্লীল ভিডিও ধারণকারী ছাত্রলীগ ক্যাডার রায়হান ও শাহ নেওয়াজের মোবাইল ফোন জব্দ করেছে। সিলেটের এয়ারপোর্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আর এ ঘটনার পর এলাকায় তোলপাড় চলছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্তৃত্ব নিয়ে কয়েক বছর আগে থেকে বিতর্কিত ওই এলাকার ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজমুল ইসলাম রায়হান, জাভেদ আহমদ, ফরহাদ আহমদ জাহিদ ও শাহনেওয়াজ বখতিয়ার। তারা বর্তমান সরকারের শাসনের শুরু থেকে এয়ারপোর্টে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়। ওই সময় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপের কারণে ছাত্রলীগ নামধারী ওই ক্যাডাররা এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে চলে আসে। এখন এয়ারপোর্টের আশপাশ এলাকা তারা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ২০১৫ সালে একই এলাকার কাহির মিয়ার দায়ের করা মামলার আসামি ছিল রায়হার ও জাভেদ। তারা আদালতের জামিনে রয়েছে। এরপরও তারা ছাত্রলীগের নামে এলাকায় নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিলেন সাধারণ মানুষ। প্রকাশ্যে দাসহ অস্ত্র নিয়ে তারা এলাকায় মহড়া দেয়। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। এয়ারপোর্টের গেইটের মুখ এখন তাদের আড্ডাস্থল।
তাদের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করেছেন ছাতকের আলমপুর গ্রামের হারুনুর রশীদ। ওই মামলায় হারুনুর রশীদ জানিয়েছেন- তার বড় ভাইয়ের নাম শফিকুর রহমান। গত এক বছর ধরে শফিকুর রহমান এয়ারপোর্ট এলাকার হোটেল খসরু প্যালেসে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করছে। ঘটনা গত শুক্রবার রাতের। ওই দিন খসরু প্যালেসে আসেন শফিকের পূর্ব পরিচিত রুবেনা বেগম রুপা নামের এক মহিলা। তিনি টাকা হাওলাত নিতে ওই প্যালেসে আসেন। তিনি যখন প্যালেসে গিয়ে ঢুকেন তখন ওই এলাকায় ছাত্রলীগ ক্যাডার খাসদবির এলাকার মৃত ফরিদ মিয়ার ছেলে ফরহাদ আহমদ জাহিদ, সালেহপুর গ্রামের আবদুস শুকুরের ছেলে মো. জাভেদ, বড়শালা এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল ইসলাম রায়হান, ঝেরঝেরিপাড়া এভারগ্রীন এলাকার বাসিন্দা মনোয়ার বখতের ছেলে শাহনেওয়াজ বখতিয়ার ও লালবাগ এলাকার রাজিব মিয়াসহ কয়েকজনও ওই প্যালেসে গিয়ে উঠে। মামলার এজাহারে হারুনুর রশীদ জানিয়েছেন- রায়হার ও জাভেদের নেতৃত্বে আসামিরা হোটেলে ঢুকে তিন তলার একটি কক্ষে জোরপূর্বক নিয়ে যায় শফিক ও রূপাকে। এ সময় তারা তাদের মারধর করে দুইজনকে উলঙ্গ করে অশ্লীল ভিডিও করে। একপর্যায়ে তারা ফোন দেয় শফিকের ভাই হারুনুর রশীদকে। ফোনে জানায়- একটি মেয়ের সঙ্গে তার ভাইয়ের অশ্লীল ভিডিও তারা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেছে। দুই লাখ টাকা না দিলে তারা মোবাইল ফোন ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে। আর তাৎক্ষণিক তাদের মোবাইল ফোনে ৫০ হাজার টাকা পাঠানোর নির্দেশ দেয়। অন্যথায় শফিককে খুন করা বলে হুমকি দেয় তারা। এদিকে- এ ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে যান হোটেল প্যালেসের ম্যানেজার মো. মিনার আহমদ। তিনি গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানালে তাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। এ সময় প্যালেসের আসবাবপত্রও ভাঙচুর করা হয়। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডার জাভেদ, রায়হান, জাহিদ ও শাহনেওয়াজকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। একই সঙ্গে তারা শফিকুর রহমান ও রূপাকেও আটক করে নিয়ে যায়। এদিকে- থানায় নেয়ার পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঁদাবাজির ঘটনা স্বীকার করেছে আটক করা চার ক্যাডার। এ সময় পুলিশ আটক চারজনের মোবাইল ফোন নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে রায়হান ও শাহনেওয়াজের মোবাইল ফোনে শফিক ও রূপার অশ্লীল ভিডিও খুঁজে পায়। পুলিশ জানিয়েছে- চাঁদাবাজি ও মারধরের ঘটনায় জাভেদ, রায়হান, জাহিদ ও শাহনেওয়াজকে ভিকটিম শফিকের ভাই হারুনুর রশীদের মামলায় গ্রেপ্তার করে শনিবারই আদালতে পাঠানো হয়েছে। এরপর তাদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আর থানা হাজতে নেয়ার পর পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে শফিক ও রূপাকে মারধর করেই তাদের অশ্লীল ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। এই ভিডিও সম্বলিত রায়হান ও শাহনেওয়াজের মোবাইল ফোন পুলিশ জব্দ করেছে। সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার ওসি (তদন্ত) এনামুল হক গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- গ্রেপ্তারের পর চার আসামিই পুলিশের কাছে ভিডিও ধারণের কথা স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে তারা চাঁদা দাবির কথাও স্বীকার করে। এ কারণে মামলায় আসামি দেখিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ আটক রূপার বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। তাকেও কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.