সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ৫ হাওরের ফসল

0
483
blank

স্টাফ রিপোর্টার: চার দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত বাঁধ ভেঙে, বাঁধ উপচে গতকাল শুক্রবার রাত থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত পাঁচ হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চল হিসেবে হাওরে পানির চাপ তৈরি হওয়ায় ফসলহানির ঝুঁকিতে রয়েছে ১৩৩ হাওরের দুই লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির বোরো ধান। এদিকে, মৌসুমের শুরুতেই কাঁচা ফসল তলিয়ে যাওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে জগন্নাথপুর উপজেলার বুরাখালি গ্রামের বাঁধ ভেঙে নলুয়ার হাওরের প্রায় ২০০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। শুক্রবার রাতে দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের খাজাউড়া গ্রামসংলগ্ন বৈশাখী বাঁধ ভেঙে চাপতির হাওর ডুবে গেছে। একই উপজেলার কাদিরপুর গ্রামসংলগ্ন তুফানখালি বাঁধ ভেঙে এই হাওরের ৩২০০ হেক্টর জমির ধান এখন পানির নিচে। রাতে তলিয়ে গেছে ধর্মপাশা উপজেলার সাথারিয়া, পাথারিয়া হাওর।
এদিকে, জেলার বোরো ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত দেখার হাওর, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, হালির হাওর, খরচার হাওরের নিম্নাঞ্চলের ধানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব হাওরের ফসলও সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক, জনপ্রতিনিধি এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৯ মার্চ থেকে জেলায় মাঝারি বৃষ্টি চলছে। এতে নদ-নদী খাল বিলের পানি বেড়ে চলছে। গতবার অর্ধেক ফসলহারানোর পর এবার পুরো ফসল নষ্ট হওয়ায় আশঙ্কা করছে। স্থানীয় কৃষকরা বাধরক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করলেও পানি আটকাতে পারছেনা। কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা যেসব স্থানে বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটেছে তার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়ি বলে অভিযোগ করছেন। কৃষকদের অভিযোগ সময় মতো যথা নিয়মে বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় পানির চাপেই বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়েছে। অনেক বাঁধে মাটি না ফেলায় সহজেই পানি ঢুকে হাওর তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৮টি হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ মেরামত, সংস্কার ও নতুন বাঁধ নির্মাণে ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরুর কথা থাকলেও কাজ শুরু হয়েছিল এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে।
উল্লেখ্য, গত বছর এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে জেলার একাধিক হাওরের ৬০ ভাগ অর্ধপাকা বোরো ধান তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয় বলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জাহেদুল হক বলেন, কয়েক দিনের বর্ষণ ও ঢলে হাওর বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিভিন্ন হাওরের ফসল ডুবতে বসেছে। শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে পাঁচটি হাওরের কাঁচা ফসল তলিয়ে গেছে। অন্য হাওরের ফসলও ডুবি ডুবি করছে। এবার কাঁচা ফসল তলিয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা।