সুনামগঞ্জ-৩ আসনে শাহীনুর পাশাকে না দিয়ে বিএনপি থেকে প্রার্থী দেয়ার দাবি

0
1044
blank

স্টাফ রিপোর্টার: ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কিংবা ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে একটি সম্ভাব্য খবর শোনা যাচ্ছে সবদিক থেকে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে এটাও প্রায় নিশ্চিত করে বলছেন তৃণমূল বিএনপির নেতারা।
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন কেন্দ্র থেকে যদিও তারা এমন কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পান নি তবে তারা নিশ্চিত যে, যদি সরকার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে পারে তাহলে বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সে অনুযায়ী সারা দেশেই ঘর ঘুচাচ্ছেন তারা।
সুনামগঞ্জ- ৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপি থেকে দলীয় প্রার্থী চেয়ে দাবী উঠছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা দাবি, এ আসন থেকে যেনো বিএনপির কাউকে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তা না হলে ভবিষ্যতে জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বিএনপি বলার মতো উদ্যমী নেতা-কর্মী পাওয়া দুষ্কর হবে। বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে বার বার অন্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী।
জানা যায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ৬ষ্ঠ নির্বাচনের পর একই সালে ১২ জুন ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় ঐক্যজোট গঠন করা হয়। এ নির্বাচনে পরাজিত হন জোটের প্রার্থী জমিয়তের নেতা অ্যাড. মাও. শাহিনূর পাশা চৌধুরী। ২০০১ সালের ১লা অক্টেবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের কাছে হার মানতে হয় শরিক দল জমিয়তের বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাও. শাহিনূর পাশা চৌধুরীকে। ২৭ এপ্রিল ২০০৫
সালে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন আবদুস সামাদ আজাদ। পরে বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষের মাত্র চৌদ্দমাস আগে উপনির্বাচন হয় এ আসনে। এ নির্বাচনে বর্তমান অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী, তৎকালীন স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মান্নানের (পান পাতা) সাথে জয়ী হন জমিয়তের শাহীনূর পাশা চৌধুরী। সে জয়কে সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগ থেকে একটি বিতর্কিত জয় বলে অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন সময়। পরে ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমএ মান্নানের কাছেও পরাজয় বরণ করেন জমিয়তের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাও. শাহিনূর পাশা চৌধুরী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কর্মী বিচ্ছিন্নতা, আন্দোলনে মাঠে না থাকা, বিএনপির নেতা-কর্মীদের প্রতি উদাসীন মনোভাব, সাধারণ নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর না নেওয়া, এলাকায় দীর্ঘদিন না আসাসহ গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দক্ষিণ সুনামগঞ্জে প্রকাশ্যে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ আছে মাও. শাহিনূর পাশা চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীদের দাবি, একটি উপ নির্বাচন ছাড়া এ আসনের কোনো নির্বাচনেও জয় লাভ করতে পারেননি শাহীনূর পাশা চৌধুরী। তবুও বার বার তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এতে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সংসদে যাওয়ার পথ মসৃণ হচ্ছে না। ফলে দলীয় রাজনীতিতে উৎসাহ হারাচ্ছেন এ দুই উপজেলার নেতা-কর্মীরা। সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দলটি। নেতা-কর্মীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে বিএনপির রাজনীতিতে।
নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে অবশ্যই এ আসনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। আর শরিক দলের প্রার্থীকে অন্য কোনো আসনে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। এর অন্যতা হলে এ আসনে বিএনপিকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি রওশন খান সাগর বলেন,‘আমরা যারা জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বিএনপি ও সমমনা রাজনীতিতে আছি তারা সকলেই বিএনপির নিজস্ব প্রার্থী চাইছি। এ জন্য যদি আন্দোলন করতে হয়, আমরা আন্দোলনে নামবো। তবু দলীয় প্রার্থীকেই ধানের শীষ প্রতীকে দেখতে চাই।’
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনছার উদ্দিন বলেন,‘আমরা যারা দল করছি তাদের সকলেরই প্রত্যাশা দলীয় প্রার্থীই মনোনয়ন পাক। দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর প্রত্যাশা দলীয় প্রার্থীর। দলীয় প্রার্থী হলে দল শক্তিশালী হবে। তবে দলের হাই কমান্ড যে সিদ্ধান্ত নিবেন তার বাইরে যাবো না।’
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. জিয়াউর রহমান শাহিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল নেতা কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। দলকে সুসংগঠিত করতে দলীয় প্রার্থীর বিকল্প নাই।’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারুক আহমদ বলেন,‘ যেহেতু দক্ষিণ সুনামগঞ্জ বিএনপির দায়িত্বে আছি সেহেতু বর্তমান উপলব্ধি হচ্ছে- আগামী নির্বাচনে অবশ্যই বিএনপির দলীয় প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিতে হবে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কর্ণেল আলী আহমদ বলেন,‘ আমদের জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুমামগঞ্জে গত বিশ বছর ধরে বহিরাগত প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এতে করে আমাদের দলের কর্মী সৃষ্টি হচ্ছে না, আমাদের নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা এলাকায় কোনো রাজনৈতিক অভিভাবক খুঁজে পাচ্ছে না। সেজন্য দিক নির্দেশনাহীনভাবে দল চলতেছে এ আসনে। যদি বিএনপির নিজস্ব প্রার্থী হয় তাহলে নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগবে। বর্তমানে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে দলীয় প্রার্থী হলে জয় নিশ্চিত। বর্তমানে দলীয় কর্মীদের মাঝে ভাল প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে যদি অতিথি পাখিদের মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে প্রাণচাঞ্চল্যে ভাটা পরবে।
তিনি আরো বলেন, ‘জমিয়ত বিএনপির সাথে শরিক দল ঠিক কিন্তু আন্দোলন সংগ্রামে, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাদের কখনোই মাঠে সক্রিয় হতে দেখা যায় নি। নির্বাচনের সময় এলে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এজন্য কর্মীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।’
সাবেক সংসদ সদস্য, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. মাও.শাহীনূর পাশা চৌধুরী বলেন-,‘ এপর্যন্ত চার বার জোট থেকে মনোনয়ন পেয়েছি। প্রতি বারই বিরোধীরা বিপক্ষে বলেন। আমার বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বক্তব্য। আমি এলাকার সবার সাথে যোগাযোগ রাখছি। এসব অভিযোগ আমাকে শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্য করা হচ্ছে।
’সূত্র সুনামগঞ্জর খবর