সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আমাদের অনেক সংগ্রামের সাথী ছিলেন: প্রধানমন্ত্রী

0
1050
blank

ঢাকা: আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা একই সঙ্গে আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক সংগ্রাম আমাদের করতে হয়েছে। তিনি আমাদের অনেক সংগ্রামের সাথী ছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে রবিবার রাতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, সুরঞ্জিত গুপ্তের সবচেয়ে বড় গুন ছিল তিনি যে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারতেন। রেফারেন্স দিতে পারতেন। আর একটি বিষয় ছিল, তার হাস্য-রসিকতা। অনেক কঠিন বিষয় তিনি হাস্যরসের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারতেন। মাঠে বক্তৃতা দেওয়ার সময়ও সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার চমৎকার ক্ষমতা তার মধ্যে ছিল। তখনকার সংসদে বক্তৃতায় দেওয়ার সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সব সময় তাকে উৎসাহিত করতেন। সংবিধান প্রণয়নের সময় অনেক আলাপ-আলোচনা সংসদে হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিরোধী দলের ভূমিকায় সেখানকার যুগে তিনি একাই একশ ছিলেন। তিনি যখন কথা বলতেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় তাকে উৎসাহিত করতেন।
তিনি আরো বলেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে প্রগতিশীল, অসম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন তিনি (সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত)। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে অন্তত পক্ষে একটা অবস্থায় দাঁড় করিয়েছি। যেভাবে জনগণের ভোট ও ভাতের আদায়ের আন্দোলন আমরা করেছিলাম, এই আন্দোলনে, সংগ্রামে, অনেক জেল-জুলুম আমাদের সহ্য করতে হয়েছে। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে সামরিকবাহিনী রাতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায় ঢুকলে তার ৮-১০ বছরের বছরের বাচ্চা ভয়ে চিৎকার করে। তার বাবাকে বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করার দৃশ্য দেখে সেই ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অনেক বছর তাকে চিকিৎসা দিতে হয়েছিল। কানাডায় নেওয়া হয়েছিল। রাজনীতি জীবনে এমন অনেক ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও আহত হয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, ‘আমরা যারা বয়োবৃদ্ধ হচ্ছি তাদেরকে তো চলে যেতেইহবে, তবে নতুন যারা, তারা যেন মুক্তিযদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে পারে সেটাই চাই। কারণ, একটা আদর্শ নিয়ে, লক্ষ্য নিয়ে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশ স্বাধীন করে গেছেন।’
এর আগে রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় চলতি সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনেন। সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী চলমান সংসদের কোনো সদস্যের মৃত্যুতে তার জীবন ও কাজের ওপর আলোচনা করা হয়।
শুরুতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি নিজ এলাকায় ও জাতীয় উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।’ শোক প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, অর্থপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এমএ মান্নান, সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, ড. আব্দুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, সাবেক ডেপুটি স্পিকার মীর শওকত আলী, ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ডা. রুস্তম আলী ফরাজি, অধ্যাপক আলী আশরাফ, সাবেক চিফ হুইপ আবদুস শহিদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মৃনাল কান্তি দাস, হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন, আব্দুল মজিদ খান, মুহিবুর রহমান মানিক, পীর ফজলুর রহমান ও মঈনউদ্দিন খান বাদল।