সুষ্ঠু নির্বাচনে দক্ষ সিইসি চান বিশিষ্টজনরা

0
447
blank
blank

ঢাকা: একটি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যে ধরনের দক্ষতা ও সাহস দরকার, সে ধরনের ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে, আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান তারা। বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বেলা ১১টা থেকে পৌনে একটা পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এই চার বিশিষ্টজন হলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। এর আগে বৈঠকে পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা থাকলেও তার নামে প্রতারণার মামলা বিচারাধীন থাকায় তালিকা থেকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) আবদুর রশিদের নাম বাদ দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাবেক সিইসি আবু হেনা বলেন, ‘কেমন ধরনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগ দেওয়া দরকার সেই পরামর্শ আমরা দিয়েছি। আমরা এ ব্যাপারে সবাই একমত নির্বাচন কমিশনে যারা নেতৃত্ব দেবেন তাদের দল নিরপেক্ষ হওয়া উচিত, বিবেকবান হওয়া উচিত, সাহসী হওয়া, প্রজ্ঞাবান এবং তাদের পরিশ্রমী হওয়া দরকার।
রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করাটাই নতুন ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ১৯৯৬-এ আবু হেনা সাহেব, ২০০১-এ আবু সাইদ সাহেব ও ২০০৮-এ শামসুল হুদা সাহেব যে নির্বাচন করেছেন সেগুলো দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু আগামীতে যে হবে তাদের সঙ্গে উনাদের একটা তফাৎ আছে। উনারা করেছিলেন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে, এই গভর্নমেন্ট কোনো প্রকার ইন্টারফেয়ারেন্স করে নাই। তারা নির্বাচনে অংশীজনও ছিলেন না। সেটা তাদের সাফল্যের একটা কারণ। এবার যে নির্বাচনটা হবে সেখানে কিন্তু রাজনৈতিক সরকার থাকবে। তাদের যে একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জ থাকবে সেটা আগের কমিশনগুলোতে ছিল না। সেখানে পলিটিক্যাল ইন্টারফেয়ারেন্স থাকতে পারে। সেটাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া বা গুরুত্ব না দেওয়া একটা বিরাট জিনিস। সেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে তাদেরকে নির্বাচন করতে হবে।’
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই সার্চ কমিটি নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। যেটা বলা হয়েছে যুক্ত করেছি, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সামান্যতম ভিন্ন থাকে তাদের যাতে নিয়োগ দেওয়া না হয়। রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি করেছেন, যোগ্য কমিটি করেছেন। আমরা এও মনে করি তারা যে ১০টি নাম পাঠাবেন যোগ্য নাম পাঠাবেন এবং রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে পাঁচটি নাম দেবেন।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন। তিনি হচ্ছেন প্রতীক। তিনি যদি একটু নরম হন তাহলে কমিশন জিরো হয়ে গেল। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কথা বলেছি, তারা কারও কথা মানে না। মেরুদণ্ড শক্ত থাকতে হবে, কোনো হুমকি ও কোনোকিছু তারা পরওয়া করবে না। শক্ত ও বয়স অবশ্যই ৭০ এর ভিতরে থাকবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি এই কথাটা বলেছি আইন নয়, পৃথিবী এগিয়ে গেছে এখন বলা হচ্ছে নির্বাচনের ব্যাপারগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। কানাডায় সহ পৃথিবীর ২০টি দেশে আছে আইন নয়, সংবিধানে আছে। বাংলাদেশেও আইন নয়, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছি।
মাহফুজ আনাম বলেন, আমরা কতগুলো প্রফেশনাল ও কতগুলো হিউম্যান ক্রাইটেরিয়ার কথা বলেছি। সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান, সাহসী, চাপে মাথা নত করবেন না। এইসব ভিত্তিতেই উনারা সিলেক্ট করেন। আল্টিমেটলি পারফরমেন্সটা তো একটা ব্যক্তির ব্যাপার। এখন উনি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে তো সার্চ কমিটির কিছু করার নেই।
একইসঙ্গে কমিটি নামের তালিকা দেওয়ার পর তা প্রকাশ করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। মাহফুজ আনাম বলেন, গতবার সার্চ কমিটি নাম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেবিনেট সেক্রেটারি সেটা প্রকাশ করেছেন। এবারও আমরা আশা করব রিকমেন্ডেশন পাওয়ার পর গতবারের মতো এটাও পাবলিক করা হবে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আবার বসবে সার্চ কমিটি।
তিনি বলেন, ওই বৈঠকে প্রাপ্ত নামগুলোর ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করবেন তথ্য আহরণ ও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। কমিটি আশা করছে আগামী ৮ তারিখের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
কমিটি যে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে সেই প্রাথমিক তালিকায় আরও সংযোজন বিযোজন হতে পারে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন সুপারিশকৃত ব্যক্তিরা যেন প্রায় একই যোগ্যতা, মেধা, দক্ষতা সম্পন্ন হন। কমিটি সুপারিশ প্রণয়নকালে তাদের পরামর্শ বিবেচনায় নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এর আগে সোমবার বিশিষ্ট ১২ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছে সার্চ কমিটি।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার।
সার্চ কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম প্রস্তাবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের সুপারিশ থেকেই অনধিক পাঁচ সদস্যের ইসি নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে।
কমিটি গঠনের পর ২৮ জানুয়ারি প্রথম বৈঠক করে সার্চ কমিটি। এরপর ৩০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দিনে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো সার্চ কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।