স্কুল পর্যায়েই ট্রাফিক আইন শিক্ষা দেয়াটা জরুরি: প্রধানমন্ত্রী

0
764
blank

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে স্কুল পর্যায়েই ট্রাফিক আইন শিক্ষাদানের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, স্কুলে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাহলেই এসব দুর্ঘটনা কমতে পারে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে কী কারণে সেটা ঘটলো, তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং শুধু চালককে দোষ দিলে হবে না। দুর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তির দোষ কতটুকু বা কী, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। সড়ক ব্যবহারে সে নিয়ম-কানুন মেনেছি কি না, সেটাও দেখা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বেইলী রোডের অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। সৌদি আরবের সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এফএসডি) এবং ওপেক ফান্ড ফার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওএফআইডি) সহযোগিতায় ২ দশমিক ১১ কি.মি এই ফ্লাইওভার অংশের নির্মাণে প্রায় ২৯৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
প্রধানমন্ত্রী ট্রাফিক আইনের সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির আহবান জানিয়ে বলেন, হঠাৎ করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হবার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকেও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। নাগরিকরা যাতে এভাবে রাস্তা পার না হয়, তা দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ট্রাফিক পুলিশদের প্রতি আহ্বান জানান।
রাস্তা-পারাপারের সময় রাস্তা-পারাপারের নিয়ম মেনে ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডার পাস বা জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপারের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত্র-তত্র দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হওয়া যাবে না, এগুলো বন্ধ করতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে কেউ দৌড়ে পার হবার সময় দ্রুতগামী একটা যান তৎক্ষণাৎ থামতে পারে না। একটি যন্ত্র চাইলেই চট করে থামানো যায় না। চট করে দৌড় মারার কারণে দুর্ঘটনা হলে কেবল চালককে দোষ দেয়া উচিত নয়।
এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সৌদি রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ এইচ এম মুতায়ইরি। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এম এ মালেক এবং এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি, ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র আনিসুল হক এবং দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সহ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনা ঘটলে আইন হাতে তুলে নেয়া থেকে নাগরিকদের বিরত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, যারা ড্রাইভারের কাঁধে দোষ দিয়ে ড্রাইভারকে মারতে যান, তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো, আগে দেখুন কার দোষে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। পথচারির দোষ কতটুকু।
তিনি বলেন, ‘যারা ট্রাফিকের দায়িত্বে আছেন, তাদেরকেও জনগণকে সচেতন করা, তাদের ট্রাফিক আইন শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরী।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নাগরিক সচেতনতা খুব বেশি দরকার। পৃথিবীর অন্যদেশে অ্যাক্সিডেন্ট হলে তো কেউ ছুটে গিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে না।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আগে দুর্ঘটনা কবলিত লোকটিকে বাঁচানো জরুরি। অতি উৎসাহী জনগণ ড্রাইভারকে মারতে যতটা উৎসাহী, আহত লোকটিকে হাসপাতালে নিতে ততটা উৎসাহী নয়। এটি দুঃখজনক। এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে।
অধিকাংশ গাড়ি দুর্ঘটনার কারণ একই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনাবশত কেউ পড়ে গেলে ড্রাইভার যদি সেই সময় গাড়িটা থামায়, তাহলে কিন্তু সে বেঁচে গেল। তাঁর কিন্তু আর জীবন নিয়ে শংকা থাকে না। হাসপাতালে পাঠানো যায়। ট্রিটমেন্ট করা যায়। যেহেতু ড্রাইভার জানে যে, এমন সময় থামলে পিটুনি খেতে হবে, পিটুনি খেয়ে মারাও যেতে পারে। তাই, সে আর থামে না। সুতরাং কেউ হাল্কা ধাক্কায় পড়ে গেলেও তার ওপর দিয়ে আবার গাড়ি চলে যায়। কারণ তখন চালক নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে। অথচ পড়ে যাওয়া লোকটিকে তখুনি উদ্ধার করা গেলে, হয়তো তাকে প্রাণে বাঁচানো যেত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে জনগণকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। দেখতে হবে কি কারণে, কার দোষে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি ‘সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট’ এবং ‘ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা দেয়ায় তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। প্রকল্পের বাকি অংশ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী আমরা ঢাকা মহানগরীকে একটি বিশ্বমানের মেট্রোপলিস হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের যানজট কমাতে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু-দুর্ভাগ্য ঢাকাবাসীর, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে এই ফ্লাইওভার নির্মাণের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। যেমন তারা বন্ধ করেছিলো তৃণমূলের প্রান্তিক মানুষের কাছে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আমাদের সরকার গৃহীত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম। এমনকি তারা সৌদি অর্থায়নে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও বন্ধ করে দিলে ২০০৮ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর তা সম্পন্ন করি।
তিনি সড়ক যোগাযোগ ও দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ঢাকা মহানগরের জন্য একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলি। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস উদ্বোধন করেছি।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, এছাড়া, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার উত্তরা থেকে মিরপুর হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি এবং হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ-এর আওতায় বাস্তবায়নাধীন ১ হাজার কোটি টাকার উর্ধ্বে ৭টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে ’ফাস্ট ট্রাক প্রকল্প’ এবং ‘মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট’ এর কাজ এগিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, বিআরটিসিকেও লোকসানী প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বিএনপি-জামায়াত সরকারকারও পরামর্শ নিয়ে সেটি বন্ধ করে দিতে চাচ্ছিল। কিন্তুু আমরা তা করতে দেইনি। কারণ সব যদি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেই, তাহলে তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াবে। আমরা বরং এটি বন্ধ না করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনকে (বিআরটিসি) লোকসানী অবস্থান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে দাঁড় করিয়েছি। তাই বিআরটিসি সারাদেশে উন্নত যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি সড়ক যোগাযোগের আঞ্চলিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে,বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-সিলেট-শিলং-গৌহাটি রুটে যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস চালু বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল) মটর ভেহিকেল এগ্রিমেন্ট এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য করিডোর সৃষ্টির বিষয়টি উল্লেখ করেন।