স্বল্পোন্নত থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ

0
489
blank
blank
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইকোসক) আয়োজিত এক ফোরামে বক্তৃতাকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি সাবলীল উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং উন্নয়ন ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় সময় সোমবার ইকোসক-এর ‘উন্নয়নে অর্থায়ন’ বিষয়ক তৃতীয় ফোরামে কান্ট্রি স্টেটমেন্ট দেওয়া বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার যে অগ্রগতি সাধন করেছে এবং যে সকল নীতিমালা গ্রহণ করেছে তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন সুবিধা এবং জনগণের জীবনের অন্যান্য মৌলিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে মর্মে তিনি উল্লেখ করেন।
বিগত বছরগুলোতে জিডিপি ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের উপরে রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের জিডিপির গড় ৭ শতাংশেরও বেশি। এর ফলে ২০০৫ সালের দারিদ্রসীমা ৪০ শতাংশ থেকে ২০১৬ সালে ২৩ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ এবছর প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে এবং এক্ষেত্রে তিনটি নির্দিষ্ট ধাপে কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি ব্যবধান নিয়ে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজস্ব প্রশাসনে কাঠামোগত সংস্কার শুরু করা হয়েছে। নতুন সরাসরি ট্যাক্স কোড ও নতুন কাস্টম আইন প্রণয়নেরও কাজ চলছে। সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে এতে স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতা আনা হয়েছে। ইলেক্ট্রনিকভাবে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা ও ই-জিপি’র সফল বাস্তবায়নের ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের প্রচার বিভাগ জানায়, অর্থমন্ত্রী ‘এসডিজি’র জন্য উদ্ভাবনীমূলক অর্থায়ন: ইসলামিক অর্থব্যবস্থার ভূমিকা এবং ‘এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আর্থিক রূপান্তর: অর্থ-প্রযুক্তির বিপ্লব  শীর্ষক দু’টি সাইড ইভেন্টে বক্তব্য রাখেন। উভয় ইভেন্টেই বাংলাদেশ ছিল সহ-আয়োজক।
‘এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আর্থিক রূপান্তর: অর্থ-প্রযুক্তির বিপ্লব’ শীর্ষক সাইড ইভেন্টে অর্থমন্ত্রী ছিলেন কি-নোট স্পিকার। অর্থপ্রযুক্তির বিপ্লব বাংলাদেশে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি মোবাইল ব্যাংকিং, ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলা, ডিজিটাল এজেন্ট ব্যাংকিং, ডিজিটাইজড্ পেমেন্ট, ক্ষুদ্রঋণ ও মাইক্রো ফাইনান্সসহ বাংলাদেশের  বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্ভর অর্থ-ব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন। ইভেন্টটিতে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রী বামব্যাং পি.এস. ব্রোডজোনেগোরো আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রী মুস্তফা মাসতুর এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএনএসক্যাপের নির্বাহী সচিব মিজ্ সামসাদ আক্তার বক্তব্য দেন।
এর আগে ইকোসকের উন্নয়নে অর্থায়ন বিষয়ক ৩য় ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতে এসডিজি অর্থায়নে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোকে আরও সক্রিয় হবার আহ্বান সম্বলিত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের একটি ভিডিও বার্তা পরিবেশন করা হয়। উচ্চ পর্যায়ের এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিরোস্লাভ লাইচ্যাক, ইকোসকের সভাপতি ম্যারি চ্যাটারডোভা এবং ডেপুটি মহাসচিব আমিনা মোহাম্মদ বক্তব্য রাখেন।এফএফডি’র চলতি কর্মসূচি আগামী ২৬ এপ্রিল শেষ হবে। এফএফডি’র এই তৃতীয় ফোরামে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।