স্বাধীনতার পর সাড়ে ১৩ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে: অর্থমন্ত্রী

0
691
blank
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত গত ৪৬ বছরে ১৩ হাজার ৩৭২ কোটি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যা থেকে সরকার এক হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। আর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের মাত্র দুই বছরে দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক ৯ হাজার ৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দুই কোটি ২৫ লাখ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। যা থেকে রাজস্ব আয় হয় ১৯ লাখ টাকা মাত্র। ১৯৭৬ হতে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ থেকে রাজস্ব সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৮১ লাখ টাকা।

সংসদে দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, ১৯৮১ হতে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ৪৫ কোটি ৮৯ লাখ কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে চার কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে ১৫০ কোটি ৭৯ লাখ কালো টাকা সাদা করা হয়। এ থেকে রাজস্ব পাওয়া যায় ১৫ কোটি আট লাখ টাকা। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ পর্যন্ত সময়ে ৯৫০ কোটি ৪১ লাখ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। যা থেকে রাজস্ব এসেছে ১৪১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৮২৭ কোটি ৭৪ লাখ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ হয়। যা থেকে রাজস্ব এসেছে ১০২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

এরপর ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সর্বাধিক ৯ হাজার ৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় ৯১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এক হাজার ৮০৫ কোটি এক লাখ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পেয়েছে, রাজস্ব দেয় ২৩০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০১৩ থেকে অদ্যাবধি ৮৫৬ কোটি ৩০ লাখ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ থেকে রাজস্ব পাওয়া গেছে ৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
সরকারদলীয় সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাতের খবর প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসলে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক পরিদর্শন দল পাঠিয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যাংকসমূহকে কেস টু কেস ভিত্তিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া গ্রাহকদের হিসাবে এ ধরনের কোনো জাল-জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে কিনা- তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত পরিদর্শনেও খতিয়ে দেখা হয়।

অর্থমন্ত্রী আরো জানান, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা দলও বিষয়টি নিয়মিত নিরীক্ষা করে থাকে এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

রিজার্ভ চুরির অর্থ আদায়ে জোর প্রচেষ্টা চলছে
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লেনদেনকারী হিসাব হতে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনে পাঠানো হয়। এর মধ্যে শ্রীলংকার বাণিজ্যিক ব্যাংক সেদেশে পাঠানো ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত দিয়েছে। তিনি জানান, ফিলিপাইনে পাঠানো ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক রিজেল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরবিসি)-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি হিসাবে স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীতে আরবিসি ব্যাংক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ৬৮ হাজার ৩০৫ মার্কিন ডলার ফেরত দিয়েছে।

এ ছাড়া ফিলিপিনো চাইনিজ ব্যবসায়ী কিম অং তার কাছে রক্ষিত সাড়ে চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৪৮৮ মিলিয়ন ফিলিপাইন পেসো সে দেশের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে ফেরত দিয়েছে। যা পরবর্তীতে নিউ ইয়র্কের এফআরবি’র বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ১৪ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা পড়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে ফিলিপাইনের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।