নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী স্বাধীন বিচার বিভাগকে ক্ষুণ্ন করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। দেশের বিচার বিভাগকে ঝুঁকি ও অবৈধ হস্তক্ষেপের মুখে ফেলেছে। আইনের শাসনকে বিপন্ন করেছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে দিয়ে করা সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর শুনানিতে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর শুনানি চলছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে দিয়ে করা সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ এ আপিল করে। এ মামলার শুনানিতে আদালতকে আইনি সহায়তা করতে সুপ্রিম কোর্টের ১২জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সোমবার নবম কার্যদিবস পর্যন্ত ৮জন বক্তব্য রেখেছেন।
শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বলেন, হাইকোর্ট ষোড়শ সংশোধনীকে বাতিল ও অবৈধ বলে যে রায় দিয়েছেন তা পুরোপুরিভাবে সমর্থন করছি। আপনারা এটি অবৈধ ও অসাংবিধানিক হিসেবে বাতিল করে দিন।
তিনি বলেন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, হংকং, জার্মানি, সুইডেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইসরাইল, জাম্বিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাকো, নিউসাউথ ওয়েলসসহ বিভিন্ন দেশে বিচারক অপসারণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অথবা এরকম পদ্ধতি রয়েছে।
বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে বঙ্গবন্ধুই সরিয়ে নেন উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের আদি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ থেকে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে প্রত্যাহার করে নেন। পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান করা হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে রায় দিলেও এই ব্যবস্থা রেখে দিয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল একটি স্বচ্ছ পদ্ধতি।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে যদি নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেন। একারণে বিচারক অপসারণের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা সে প্রশ্ন ওঠে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংসদের মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেওয়ায় বিচার বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
আরেক অ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনী রাখার পক্ষে মত দেন। শুনানিতে তিনি বলেন, সংসদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দিয়ে যে সংশোধনী আনা হয়েছে এটি কার্যকর সংশোধনী। এ সংশোধনীর মাধ্যমে আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়া হয়েছে। এই সংশোধনী অবশ্যই আইনত বৈধ। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে বিচার বিভাগকে উপলব্ধি করতে হবে এর সঙ্গে তাদের নিজেদের স্বার্থের বিষয়টি সরাসরি জড়িত। তাই সংসদের হাতে বিচারক আপসারণের যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তার পরিবর্তনের দরকার নেই।
অ্যামিকাস কিউরির বক্তব্যে এএফ হাসান আরিফ বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিচারকদের নিজস্ব প্রয়োজনে নয়। জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাংলাদেশ সংবিধানের একটি অপরিহার্য অংশ বলে রায় দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে সংসদের কাছে জবাবদিহিতা দিতে হয়। মনে রাখতে হবে সংসদ এবং সরকার এক। যেহেতু একই সদস্য দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল যেটা সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের ক্ষমতা নিয়ে নেওয়া হয়েছিল, চতুর্থ সংশোধনীতে ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আনা হয়েছিলো। পরবর্তীকালে অষ্টম সংশোধনী মামলায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পঞ্চদশ সংশোধনীতেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখা হয়।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দিয়ে অ্যামিকাস কিউরি ড. আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির হাতে থাকতে হবে। যদি এটা সংসদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ভারসাম্য নষ্ট হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.