আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ছাপা শাড়িতে দোহারা চেহারার মহিলাটি হন্তদন্ত হয়ে থানায় ঢুকেই ডিউটি অফিসারকে বললেন, স্যার, কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বরের ধড়-মুণ্ড আলাদা করেছি। আমাকে ধরুন। অফিসার শুনে থ! মাথাটাথা খারাপ নয় তো? মহিলার কথায় কতটা গুরুত্ব দেবেন, তখনও বুঝে উঠতে পারছেন না অফিসার। জানতে চাইলেন, 'সত্যি বলছেন?' মহিলার জবাব, 'মিথ্যে কেন বলব? একবার আমার সঙ্গে চলুন।' কেন করলেন এমন? এ বার আর উত্তর নেই। শুধু বললেন, 'সঙ্গে চলুন, সব জানতে পারবেন।'
কথা না বাড়িয়ে পুলিশ হাজির হয় প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ফলতার বঙ্গনগর গ্রামে মহিলার বাড়িতে। বাইরে থেকে তালা খুলে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঢোকেন মহিলা। দেখা যায়, মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তারই মধ্যে পড়ে এক যুবকের দেহ। ধারাল অস্ত্রের কোপে গলা দেহ থেকে প্রায় কেটে বেরিয়ে যাওয়ার দশা!
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে গ্রেফতার করা হয়েছে অনিমা পাল নামে বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলাকে। তার স্বামী দিব্যেন্দু পালের (৪০) দেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্লাইউডের দোকানে কাজ করতেন দিব্যেন্দু। প্রতিমাও গড়তেন। বছর তেরো আগে পাশের বাড়ির অনিমার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। পাল দম্পতির বারো বছরের ছেলে ও আট বছরের মেয়ে আছে।
কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের এমন পরিণতি কেন? জানা গিয়েছে, দিব্যেন্দুর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে কেন্দ্র করেই অশান্তি ঘনায় সংসারে। মাস আটেক আগে কলকাতায় কাজে গিয়ে এক কিশোরী পরিচারিকার সঙ্গে আলাপ হয় তার। মালদহের ওই মেয়েটিকে ঘরে তোলেন তিনি। যা মেনে নিতে পারেননি অনিমা।
এ নিয়ে গাঁয়ের মাতব্বরদের সামনে ঠিক হয়, এক বাড়িতেই পাশাপাশি দুই ঘরে ঠাঁই পাবে দুই বৌ। তবে হাঁড়ি আলাদা হবে না। কিন্তু সংসারে শান্তি ফেরেনি। প্রতিবেশীদের থেকে পুলিশ জেনেছে, মাঝে মধ্যেই ঝগড়ার শব্দ আসত বাড়ি থেকে।
অভিযোগ, অনিমাদেবীকে মারধর করতেন দিব্যেন্দু। তবে দ্বিতীয় পক্ষ আসার আগে অনিমাকে ঝগড়াঝাটি করতে দেখেননি কেউ। শুক্রবার বিকালে অনিমার দুই ছেলেমেয়ে বাড়ি ছিল না। ছিল না দ্বিতীয় পক্ষের 'স্ত্রী'ও।
অনিমা পুলিশকে জানিয়েছেন, স্বামীর উপরে অনেক দিনের রাগ জমে ছিল তার। পরিস্থিতি বুঝে ঘুমন্ত স্বামীর গলায় কোদালের কোপ মারেন। ঘটনাস্থলেই ছটফট করতে করতে মারা যান দিব্যেন্দু।
যে হলুদ ছাপা শাড়ি পরে অনিমা গিয়েছিলেন থানায়, সেই পোশাকে রক্তের ছিটে দেখেননি তদন্তকারী অফিসারেরা। যা থেকে অনুমান, স্বামীকে খুনের পরে পোশাক বদলে ফেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোদাল দিয়ে কুপিয়ে স্বামীকে খুন করেছেন বলে অনিমা দাবি করলেও, সেই কোদালটি এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। জেরা করা হচ্ছে মহিলাকে। ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র- আনন্দবাজার
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.