সড়কের আনন্দ, বেদনা ও আতঙ্ক

0
1050
blank
blank
যখন মেঘনা ব্রিজ তৈরি হয়নি তখন ফেরি পার হওয়ার জন্য অনেক রাত রাস্তায় কাটিয়েছি। জামাত-শিবিরের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য ঘরের বাতি না জ্বালিয়ে অন্ধকারে প্রস্তুতি নিয়ে গভীর রাতে ঢাকা রওনা দিয়েছি। ছাত্রলীগের ছেলেদের মাস্তানি করার অপরাধে শাস্তি দেওয়ার কারণে, তারা আমাদের রাস্তায় খুঁজে বেড়াচ্ছে তার অভিজ্ঞতাও আছে। দিন দুপুরে পিছন থেকে বাস ধাক্কা দিয়েছে, কুয়াশায় সামনে থেকে কিংবা পাশ দিয়ে চলতে থাকা ট্রাকের টায়ার ফেটে তার শক্তিশালী ঝাপটায় পাশ থেকে গাড়ির দরজা জানালা দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।

গণিত অলিম্পিয়াডে যাওয়ার সময় গাড়ি একসিডেন্টে সবাই কমবেশি আহত, একজন সহকর্মী গুরুতর, তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে চলন্ত গাড়িগুলো থামানোর চেষ্টা করছি কেউ থামতে রাজি নয়! শেষ পর্যন্ত একটা ট্রাক আমাদের হাসপাতালে নিয়েছে। হঠাৎ করে বাস ধর্মঘট, স্কুল ছুটির পর ছোট ছোট মেয়েরা বাসায় ফিরে যেতে পারছে না। আমি আর আমার স্ত্রী মিলে আমাদের মাইক্রোবাসে তাদের গাদাগাদি করে তুলে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি। (নামানোর সময় তাদের বিশাল লেকচার, খরবদার, যত কষ্টই হোক ভুলেও কখনো অপরিচিত মানুষের গাড়ীতে উঠবে না!) রাস্তার পাশে ক্ষেতের মাঝে চার চাকা উপরে তুলে পড়ে থাকা বাস কিংবা ট্রাক খুবই পরিচিত একটা দৃশ্য, তবে বিষয়টা সবচেয়ে হৃদয়বিদারক হয় যখন দেখি সদ্য সদ্য একসিডেন্ট হওয়ার পর রাস্তার পাশে মৃতদেহগুলো সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ একসময় প্রায় নিয়মিত ঘটনা ছিল, তখন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে শিখেছি। কখনো কখনো আন্দোলন উত্তপ্ত হয়ে উঠে, গাড়ি ভাংচুর শুরু হয় তখন গাড়ি ঘুরিয়ে পিছন দিকে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে যেতে হয়। এক কথায় বলা যায়, বাংলাদেশের সড়ক পথে চলাচল করার সব রকম অভিজ্ঞতা আমার আছে। কাজেই আমি একজন খাঁটি বিশেষজ্ঞ, এ ব্যাপারে আমি দায়িত্ব নিয়ে কথা বলার অধিকার রাখি।

কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশের সড়ক পথের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? আমি এক কথায় সেটা বলে দিতে পারব সেটা হচ্ছে বেপরোয়া ড্রাইভিং। এই দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী কিংবা বড় বড় কর্মকর্তারা কোনোদিন সেটা সম্পর্কে বলতে পারবেন না। কারণ তাদের কখনো সেটা দেখতে হয় না। বেপরোয়া ড্রাইভিং যে কী পরিমাণ বেপরোয়া সেটি শুধু আমাদের মত সড়ক পথের সাধারণ যাত্রীরা জানে।

২.

বেশ কিছুদিন আগের কথা, আমি বাসে করে ঢাকা যাচ্ছি। আমার সিট ঠিক ড্রাইভারের পিছনে। ড্রাইভার কিভাবে গাড়ি চালাচ্ছে সেটা আমি দেখতে পাচ্ছি। বিশাল একটা বাস সরু একটা রাস্তায় গুলির মতো ছুটে যাচ্ছে। অনেক বড় এবং দামি বাস। শুনেছি ড্রাইভারদের এই বাস চালানোর জন্য বিদেশ থেকে ট্রেনিং দিয়ে আনা হয়েছে। আরো শুনেছি এই বাস ড্রাইভারের বেতন আমাদের বেতন থেকেও বেশি। এটা অবশ্য যাচাই করে দেখার কোনও সুযোগ পাইনি! এরকম দামি বাস ঠিকভাবে চালালে বাসটি আসলেই চলছে নাকি দাঁড়িয়ে আছে সেটাও বোঝার কথা নয়- দেশের বাইরে বাস চড়ায়, অভিজ্ঞতা থেকে আমি সেটা জানি। কিন্তু এই বাসটি এমনভাবে চলছে যে আমরা যাত্রীরা বাসের ভেতর একবার ডানদিকে একবার বামদিকে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছি। আমি বিস্ফারিত চোখে সামনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ দেখলাম আমাদের বাসটি অন্য কোনো একটি বাস, ট্রাক কিংবা গাড়িকে ওভারটেক করার জন্য রাস্তার ডান পাশে চলে এসেছে। এটি নূতন কিছু নয়, সবসময় এটি হয়। সব বাস ট্রাক গাড়ি বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে নিজের লেইন থেকে অন্যের লেইনে চলে আসে। আমি হঠাৎ দেখলাম সামনে একটি রিকশা। মহা সড়কে সম্ভবত রিকশা থাকার কথা নয়, কিন্তু দেশে কে আর এই নিয়ম মানে? একটা রিকশা আর কতোটুকু জায়গা নেয়? সহজেই তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু আমি হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমাদের বাসের ড্রাইভার অবিশ্বাস্য নৃশংসতায় সোজাসুজি সেই রিকশাটিকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করল! আমি আতঙ্কে চিৎকার করে চোখ বন্ধ করলাম এবং যখন চোখ খুলেছি তখন টের পেয়েছি একেবারে শেষ মূহুর্ত্তে রিকশাটি রাস্তা থেকে নিচে সরে গিয়ে তার প্রাণ রক্ষা করেছে। আমার কিছুক্ষণ লাগল ধাতস্থ হতে, যখন ধাতস্ত হয়েছি তখন ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, “এটা আপনি কী করেছেন? রিকশাটিকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন?” ড্রাইভার আমার দিকে তাকালো কোনো কথা বলল না, তারপর তার হেল্পারকে বলল আমার সামনের পর্দাটা টেনে দিতে। আমি যেন তার ড্রাইভিং আর দেখতে না পারি।

আমি অসংখ্যবার সড়ক পথে যাতায়াত করার সময় উল্টো দিক দিয়ে দৈত্যের মত একটি বাসকে একসাথে একাধিক ওভারটেক করার কারণে পুরো রাস্তা দখল করে ছুটে আসতে দেখেছি। আমার নিজের ড্রাইভার কোনোরকম ঝুঁকি না নিয়ে অনেক আগেই সেই দৈত্যাকার বাসকে যেতে দেওয়ার জন্য রাস্তার পাশে নেমে গেছে। এই ব্যাপারগুলো আমি জানি, তবে আমার ধারণা ছিল ড্রাইভাররা ভয় দেখিয়ে নিজের জন্য রাস্তা খালি করে নেয়। তবে নিজের চোখে দেখে আমি আবিষ্কার করলাম আসলে বিষয়টা তার থেকে অনেক ভয়ানক। এই দৈত্যাকার বাসের ড্রাইভাররা আক্ষরিকভাবে ছোট গাড়ি, স্কুটার কিংবা রিকশাকে পিষে ফেলার চেষ্টা করে। তাদের প্রাণের জন্য কোনো মায়া নেই, ড্রাইভিং করার পদ্ধতি হিসেবে তারা অন্যদের পিষে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা প্রাণে বাঁচতে চায় সেটা তাদের মাথাব্যথা, বাস ড্রাইভারদের নয়। সারা পৃথিবীর আর কোথাও এরকম ভয়ংকর মনোভাবের ড্রাইভার আছে কি না আমি জানি না।

ড্রাইভিং এবং সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে নূতন আইন হয়েছে এবং সেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনা সম্পর্কে পড়তে এবং জানতে আমি আগ্রহ পাচ্ছি না। যে দেশে ড্রাইভাররা মনে করে যেহেতু আমার গাড়ি সাইজে বড়, দাম বেশি, তাই রাস্তায় আমার অধিকার বেশি, আমি মানুষজনকে পিষে মেরে ফেলার চেষ্টা করব, যার বেঁচে থাকার ইচ্ছা যে যেভাবে পারে বেঁচে থাকার চেষ্টা করুক। সেই দেশে ড্রাইভিং সংক্রান্ত আইন কানুন নিয়ে আলাপ আলোচনার কোনো অর্থ আছে কিনা, আমি জানি না।

প্রথমে সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে মানুষের প্রাণ সবচাইতে মূল্যবান, কোনোভাবে কখনো কারো প্রাণের ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। সেজন্য আমার যত অসুবিধা হোক সেই অসুবিধা আমাকে মেনে নিতে হবে। যে দেশে প্রাণের মূল্য নেই সেই দেশের আইনের কী মূল্য আছে?

৩.

বেশ কয়েক বছর আগে আমি অফিসে বসে আছি হঠাৎ আমার এককালীন ছাত্র এবং বর্তমান সহকর্মীর কাছ থেকে ফোন এসেছে। ফোনটি ধরতেই তার গলায় হাহাকারের মত আর্তনাদ শুনতে পেলাম। এইমাত্র তার বাস আরেকটা বাসের সাথে মুখোমুখি একসিডেন্ট করেছে, তার চারপাশে মৃতদেহ এবং মৃতদেহ (যতদূর মনে আছে সব মিলিয়ে ষোলজন মারা গিয়েছিল)। নিজের দেশটাকে নিয়ে যতই হা-হুতাশ করি না কেন, আমাদের এই সাদামাটা দেশটার জন্য গভীর একটা ভালোবাসা আছে, কারণ এই দেশে ভয়ংকর বিপদের সময় খুবই সাধারণ মানুষ সাহায্য করার জন্য ছুটে আসে। এবারেও তাই হয়েছে। একজন রিকশাওয়ালা জানালা দিয়ে ঢুকে আমার আহত তরুণ সহকর্মীকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। ফিরে এসে আরেকজনকে, তারপর আরেকজনকে, এভাবে যতজনকে সম্ভব সে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। আমার তরুণ সহকর্মীকে সেখান থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং সে শেষ পর্যন্ত বেঁচে গিয়েছিল।

আমার সহকর্মী সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর আমি তাকে বাস কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি করিয়েছিলাম। এই দুর্ঘটনাগুলো আসলে মোটেও দুর্ঘটনা নয়- এগুলো হচ্ছে বাস কোম্পানির অবহেলা এবং ড্রাইভারদের বেপরোয়া ড্রাইভিং। আমি ভেবেছিলাম যদি কোনো দিন কোনোভাবে একটা বাস কোম্পানিকে অভিযুক্ত করিয়ে তাদের কাছে থেকে অনেক বড় ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়, তাহলে দেশের সব বাস মালিকেরা সাবধান হয়ে যাবে। মানুষের প্রাণরক্ষার জন্য না হলেও শুধুমাত্র গাঁটের পয়সা থেকে বড় জরিমানা দেওয়ার ভয়ে তারা হয়তো একটু সাবধানে বাস চালাবে।

দীর্ঘদিন মামলা চলেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। একটা দুর্ঘটনার পর পর বিআরটিএ থেকে একটা রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। এই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বিআরটিএ কখনোই বাস কোম্পানির বিপক্ষে কিছু লিখে না, এবং তার কারণটি বুঝতে আমাদের রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হবে না।

আমার বিশ্বাস দেশে যদি দুর্ঘটনার পর দোষী ড্রাইভার কিংবা বাস কোম্পানিগুলোকে আহত নিহতদের বড় ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা যায়, শুধুমাত্র তাহলেই এই অশুভ চক্র একটুখানি সতর্ক হবে। মানুষের প্রাণকে একটুখানি মূল্য দেবে। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৯, পাস করার সাথে সাথে আমরা সারা দেশে একটি বিচিত্র নাটক অভিনয় হতে দেখলাম। সারা দেশে ঘোষিত এবং অঘোষিত বাস ট্রাক ধর্মঘট। দেশের সব মানুষ রাতারাতি পরিবহন শ্রমিকদের হাতে পুরোপুরি জিম্মি হয়ে গেল। সারা পৃথিবীর কোথাও এরকম ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের দেশে এটি ঘটে এবং আমরা আজকাল মোটামুটি এতে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছি। আমরা মেনে নিয়েছি বাস মালিক এবং পরিবহন শ্রমিকেরা যখন খুশি যেভাবে খুশি আমাদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়ে দেবে, আমাদের সেটা মেনে নিতে হবে।

অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না। বাংলাদেশ ছোট্ট একটুখানি দেশ, এই দেশটি ট্রেন লাইন দিয়ে আষ্টে-পৃষ্টে বেঁধে ফেলা সম্ভব। আমি সড়ক পথে যাতায়াত সংক্রান্ত একজন ‘বিশেষজ্ঞ’, আমি জোর গলায় ঘোষণা দিতে পারি এই দেশে সড়কপথে যাতায়াত যেরকম একটি বিভীষিকা ট্রেন পথে যাতায়াত ঠিক সেরকম একটি আর্শিবাদ। আমাদের পাশের দেশ ভারতবর্ষেও অসাধারণ ট্রেন যোগাযোগ গড়ে তোলা হয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশে সেটি গড়ে উঠেনি। কেন গড়ে উঠেনি কিংবা কেন গড়ে উঠছে না? এমন তো না যে এখন আমাদের দেশের টাকা পয়সার টানাটানি। আমরা তো প্রায় নিয়মিতভাবে নূতন নূতন মেগা, সুপার মেগা প্রকল্পের খবর পড়ছি। তাহলে কেন সারা দেশে নূতন নূতন রেল লাইন বসানো হচ্ছে না? কেন সেই লাইনগুলো দিয়ে প্রতি পাঁচ মিনিটে একটার পর আরেকটা ট্রেন যাচ্ছে না? কেউ কী কখনো ঢাকা-সিলেট কিংবা চট্টগ্রাম-সিলেট ট্রেনে গিয়েছে? সেই ট্রেনগুলোর কী ভয়াবহ অবস্থা কেউ কী জানে? আমরা কী একটুখানি নিরাপদ ট্রেনের আশা করতে পারি না? তাহলে কেন এতো বছর পরেও দেশে আধুনিক একটা ট্রেনের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠল না?

আমি এর দুটি ব্যাখ্যা শুনেছি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা তার সত্যতা নিয়ে কথা বলতে পারবেন। প্রথম ব্যাখ্যাটি এরকম: বাংলাদেশে পৃথিবীর যাবতীয় বাস, গাড়ি, ট্রাক যেন বিক্রি করা যায় সেজন্য এখানে রাস্তাঘাট তৈরি করার জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক টাকা পয়সা ঋণ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ট্রেন যোগাযোগকে নিরুৎসাহিত করে যাচ্ছে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি এরকম: এই দেশে বাস মালিকেরা অসম্ভব ক্ষমতাশালী মানুষ, তাদের বাসের ব্যবসা যেন ঠিকভাবে চলে সে জন্য তারা কখনো এই দেশে ট্রেন যোগাযোগ গড়ে তুলতে দেবে না।

যদি সত্যি সত্যি আমাদের দেশে ট্রেনের চমৎকার একটা নেটওয়ার্ক থাকতো আমরা সবাই যদি ট্রেনে যখন খুশি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারতাম, তাহলে কী এই দেশের বাস মালিক আর শ্রমিকরা এরকম হুট করে ধর্মঘট ডেকে পুরো দেশ অচল করে দিতে পারতো?

সত্যি যদি কথায় কথায় ধর্মঘট ডেকে বসতো, আমরা কী তখন তাদের থোড়াই কেয়ার করতাম! কেন আমাদের নিজের দেশে অন্যদের জিম্মি হয়ে থাকতে হবে?

মুহম্মদ জাফর ইকবাললেখক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।