২৯ জুলাই থেকে মাঠে থাকবেন ১৮ ম্যাজিস্ট্রেট

0
944
blank
blank

সিলেট: নির্বাচনকালীন নগরের আইন শৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে দায়িত্ব পালন করবেন ১৮ ম্যাজিস্ট্রেট। ২৯ জুলাই রোববার থেকে ১ আগস্ট বুধবার পর্যন্ত তারা মাঠে কাজ করবেন। পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র ১৪ প্লাটুন সদস্যসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৪ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের তথ্য কর্মকর্তা প্রলয় কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিচারিক ক্ষমতাসহ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ
নির্বাচনকালীন সংঘটিত অপরাধ আমলে নিয়ে এবং তা সংক্ষিপ্ত বিচারের জন্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের ৯ কর্মকর্তাকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২৯ জুলাই ভোট গ্রহণের আগের দিন, ভোট গ্রহণের দিন ৩০ জুলাই ও পরের দুইদিন সহ মোট ৪ দিন তারা দায়িত্ব পালন করবেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ, ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম এমদাদুল হক, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ খুরশীদ আলম, ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা, ১৩, ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাঁকন দে, ১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাহবুবুর রহমান ভূঁঞা, ১৯, ২০ ও ২১ নং ওয়ার্ডে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান ছিদ্দীকি, ২২, ২৩ ও ২৪ নং ওয়ার্ডে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান ও ২৫, ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডের জন্য সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

প্রতিদিনের প্রতিবেদন প্রেরণ করতে হবে
দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় আদালত পরিচালনার জন্য একজন সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তা (এএস আই’র নি¤েœ নয়) ও ২ জন কনস্টেবল নিয়োগ করার জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ দায়িত্ব পালনের প্রতিদিনের প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিবের (আইন) নিকট প্রেরণ করবেন। প্রতিবেদনে অভিযোগকারীর নাম-ঠিকানা, অভিযুক্তের নাম-ঠিকানা, অভিযোগের তারিখ ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ, অভিযোগের বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থার বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের এক প্রজ্ঞাপনে এসব কথা বলা হয়েছে।

আছেন ৯ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রের সার্বিক দেখভালোর জন্য দায়িত্ব পালন করবেন ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতি ৩ ওয়ার্ডের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণও ৪ দিন মাঠে কাজ করবেন। ৯টি ওয়ার্ডে যে সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন সিলেটের সহকারী কমিশনার মোঃ এরশাদ মিয়া, সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, সহকারী কমিশনার উম্মে মালিক রুমাইয়া, সহকারী কমিশনার খৃষ্টফার হিমেল রিছিল, সহকারী কমিশনার সুনন্দা রায়, সহকারী কমিশন মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী, সহকারী কমিশনার মোঃ আশরাফুল হক, সহকারী কমিশনার ইরতিজা হাসান ও সহকারী কমিশনার শাহিনা আক্তার।

১৪ প্লাটুন বিজিবি থাকবে মাঠে
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ভোটের দিন ভোর থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত নগরীতে ১৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হবে। প্রতি ২টি ওয়ার্ডে থাকবে ১ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। বিজিবি সদস্যরা ভোট কেন্দ্রের বাইরে যাতে কোন ধরনের বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে না পারে, ভোটারদের যেন কেউ বাধা দিতে না পারে সেদিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখবেন। ভোটের দিন কঠোরভাবে বিশৃংখলা প্রতিহত করবেন বিজিবি সদস্যরা।

প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে র‌্যাবের টিম
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব সদস্যরা প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে থাকবেন। নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে থাকবে র‌্যাবের ২৭টি টিম। ভোট কেন্দ্রের বাইরে র‌্যাব সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। তবে প্রতি ওয়ার্ডের জন্য কতজন র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হবে তা নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানাতে পারেনি।

পুলিশ-আনসারের ২৭ টিম থাকবে
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নগরীর প্রত্যেক ওয়ার্ডে পুলিশ-আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। ভোটের আগের দিন থেকে ভোটের দু’দিন পর পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে। এছাড়াও ৩টি ওয়ার্ডের জন্যে থাকবে ১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স। নগরীতে মোট ৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। তবে মোবাইল ফোর্স ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্য সংখ্যার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

সাধারণ ভোট কেন্দ্রের জন্য ২২ জন
নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে একজন এস আই, একজন এএসআই ও ৫ জন কনস্টেবলসহ মোট ৭ জন সশস্ত্র পুলিশ সদস্য, লাঠিসহ ১২ জন আনসার সদস্য, ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য ১ জন, এপিসি আনসার সদস্য ১ জন ও পিসি আনসার সদস্য ১ জনসহ উপরোক্ত ২২ জন একটি ভোটকেন্দ্রের পুরো নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ২৪ জন
সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রকে নির্বাচন কমিশনের ভাষায় বলা হয়, ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ভোট কেন্দ্র। একটি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য থাকবেন পুলিশসহ ২৪ জন সদস্য। এর মধ্যে রয়েছেন একজন এসআই, একজন এএসআই ও ৫ জন কনস্টেবলসহ সশস্ত্র ৭ পুলিশ সদস্য, লাঠিসহ ১২ আনসার সদস্য, ৩ জন ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য, ১ জন এপিসি আনসার সদস্য ও ১ জন পিসি আনসার সদস্য। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের প্রতি ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারীও থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সহ নগরীতে আইন শৃংখলা বাহিনীর ৪ হাজারেরও বেশী সদস্য মোতায়েন থাকবেন।

যোগাযোগ করা হলে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা (উপজেলা নির্বাচন অফিসার) প্রলয় কুমার সাহা বলেন, জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট টানা ৪ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। ১৪ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। অবাধ-শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা কতটি এ প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ জুলাই সোমবার সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৪র্থ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন হলেন মহিলা ভোটার। এ বছর মোট ভোট কেন্দ্র ১৩৪ টি এবং ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯২৬টি। এর মধ্যে ৩৪ টি হল অস্থায়ী ভোট কম। ২০১৩ সালের ১৫ জুন শনিবার সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩য় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।