Home অর্থনীতি অর্থনীতির মূল লক্ষ্য ব্যবসা নয়, মানুষ: বিশ্ব ইসলামী অর্থনীতি সম্মেলনে ড. ইউনূস

অর্থনীতির মূল লক্ষ্য ব্যবসা নয়, মানুষ: বিশ্ব ইসলামী অর্থনীতি সম্মেলনে ড. ইউনূস

514
0

ঢাকা: বিশ্ব ইসলামী অর্থনীতি সম্মেলন উদ্বোধনে যোগদান করেছেন বাংলাদেশি নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মহামান্য শেখ মোহাম্মদ বিন রশীদ আল মাখতুম এর সাথে তিনি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ইউনূস সেন্টারের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

মদিনা জুমারিয়াহ্‌তে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে ৪,০০০ নীতি-নির্ধারক, ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থ-বিষয়ক পেশাদারগণ অংশগ্রহণ করেন।

প্রফেসর ইউনূস বিশ্ব ইসলামী অর্থনীতি সম্মেলনের মূল উদ্বোধনী বক্তব্যও প্রদান করেন। তার বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন উদ্বোধন করতে ফ্লোর নেন। প্রফেসর ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন যে, অর্থনীতির মূল লক্ষ্য ব্যবসা নয়, মানুষ। প্রবৃদ্ধির হার ব্যবসার অবস্থাকে প্রতিফলিত করে, মানুষের অবস্থা নয়।

তিনি যুক্তি দেখান যে, পৃথিবীকে টেকসই করতে হলে ব্যবসাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে: ব্যবসাকে একটি P অর্থাৎ Profit- এর পরিবর্তে ৩টি P-র লক্ষ্যে অর্থাৎ People, Planet ও Profit- কে সমান গুরুত্ব দিয়ে পরিচালিত করতে হবে।কেবল এভাবেই ব্যবসা মানুষের অবস্থা প্রতিফলিত করতে পারবে।

তিনি শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে এই সতর্কবানী উচ্চারণ করেন যে, ব্যবসার উদ্দেশ্য পূনঃনির্ধারণ করতে না পারলে আমরা এমন এক বিশ্বে পৌঁছাব যেখানে ১ হাজারেরও কম মানুয়ের হাতে এই গ্রহের প্রায় সকল সম্পদ কেন্দ্রীভূত হবে।

দুবাই চেম্বার, দুবাই ইসলামিক ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট সেন্টার (DIEDC) ও টমসন রয়টার্স কর্তৃক আয়োজিত এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামী অর্থনীতির পরিবর্তনশীল চালিকাশক্তিগুলো পরীক্ষা করে দেখা।

এর আগে রবিবার প্রফেসর ইউনূস আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে ‘মোহাম্মদ বিন রশীদ আল মাখতুম গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ফাউন্ডেশন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন, কেননা প্রধানমন্ত্রী চান যে ফাউন্ডেশন দারিদ্র দূরীকরণে প্রফেসর ইউনূসের কাজ দ্বারা উৎসাহিত হোক।

প্রধানমন্ত্রী ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যত কর্মসূচি নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের সাথে আলোচনা করেন এবং ফাউন্ডেশনের এজেন্ডা তৈরীতে প্রফেসর ইউনূসের সহায়তা চান।

প্রফেসর ইউনূস যাতে নির্বিঘ্নে দুবাই আসতে পারেন সেজন্য তাকে আবাসিক ভিসা দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়কে নির্দেশ দেন। ঐ দিনই প্রফেসর ইউনূসের জন্য ভিসা ইস্যু করা হয়।

বিভিন্ন সেশনে অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর মুবারক রশীদ আল মনসূরী, দুবাই ইসলামী ব্যাংক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ড. আদনান চিলওয়ান, আবুধাবী ইসলামী ব্যাংক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তিরাদ আল মাহমূদ এবং এমিরেট্‌স ইসলামী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী জামাল বিন গালাইতা সহ আরব আমিরাতের ইসলামী আর্থিক খাতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ।

এছাড়াও দুবাইতে রবিবার অনুষ্ঠিত আবুধাবী ইসলামী ব্যাংক-এর এথিক্যাল ফাইনান্স ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড (EFICA) অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস দারিদ্র, বেকারত্ব ও পরিবশেগত সমস্যার মত পৃথিবীর জরুরী সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে আর্থিক সেবা খাতের সংস্কারের আহ্বান জানান।

এই অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট বিশ্ব ব্যাংকিং ব্যবস্থার মারাত্মক ত্রুটিগুলোকে বাজার ব্যবস্থায় কতিপয় প্রভাব বিস্তারকারীর দায়িত্বহীন আচরণসহ কিভাবে উন্মোচিত করেছে তা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এসব ভুল সংশোধনের এবং বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থাকে মৌলিকভাবে পূনর্গঠিত করার এখনই সুযোগ।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘মানুষের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনা বরাবরই আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর এজন্যই EFICA-র মতো শিল্পে পরিবর্তন সূচনাকারী ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নকারী উদ্যোগ অত্যন্ত আশাপ্রদ। বিভিন্ন শিল্পগুলোর একযোগে কাজ ও পারষ্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা একটি ভিন্ন ধরনের ব্যবসা পরার্থপরতা ভিত্তিক ব্যবসা গড়ে তুলতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, সমাধানটা হচ্ছে যাকে আমি বলছি সামাজিক ব্যবসা।’

তিনি সামাজিক ব্যবসাকে আর্থিকভাবে টেকসই একটি কোম্পানী হিসেবে ব্যাখ্যা করেন যার মূল লক্ষ্য সমাজের কোন সমস্যার সমাধান করা, শুধু মুনাফার অনুসন্ধান করা নয়।

ইউনূস বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকিং খাত একটি নৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তা সামাজিক ব্যবসার ধারনার সাথে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ।’

তিনি বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের উদাহরণ দেন, যা দারিদ্র মোকাবেলার জন্য এদেশের চরম দরিদ্রদের জামানত বিহীন ঋণ দিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ‘যে সকল কোম্পানী সমাজের মঙ্গলের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছে তাদের অর্থায়ন প্রয়োজন, আর এখানেই ব্যাংকগুলো সামাজিক ব্যবসার বিকাশে একটি মূল ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা একটি সামাজিক ব্যবসা অর্থায়ন কোম্পানী তৈরি করতে পারি যা নবায়নযোগ্য শক্তি, স্বাস্থ্য সেবা বা তথ্য প্রযুক্তিতে অথবা স্থানীয় জনগণকে ক্ষুদ্রঋণ দানকারী কোন কোম্পানীকে অর্থায়ন করতে পারে।’

Previous articleসেপ্টেম্বর মাসে ১২২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
Next articleকেরানীগঞ্জে স্ত্রী ও সৎছেলেকে কুপিয়ে হত্যা