গণহত্যায় কামারুজ্জামানের জড়িত থাকার তথ্য কোথাও নেই: পরিবার

0
646

ঢাকা: সোহাগপুর গণহত্যায় মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানের জড়িত থাকার তথ্য ইতিহাসের কোথাও নেই বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের পক্ষে কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা বলেন। এসময় কামারুজ্জামানের ভাই, স্ত্রী ও শ্যালক উপস্থিত ছিলেন।
হাসান ইকবাল বলেন, তার বাবা কামারুজ্জামানকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সাজানো অভিযোগে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে। তাকে যে সোহাগপুরের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সেই সোহাগপুরে তিনি কখনো যাননি। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা ফর্মাল চার্জেও সোহাগপুর গণহত্যার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন এমন অভিযোগ করা হয়নি।
তিনি বলেন, এই মামলায় তার (কামারুজ্জামান) বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষী ছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১০ জন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। পরে নতুন করে তিনজন মহিলা সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এই সাক্ষীরা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীতে সোহাগপুর গণহত্যার সময় কামারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন এমন দাবি করেননি।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে ভিকটিম বলে দাবিকৃত চার সাক্ষীর সবাই স্বীকার করেছেন যে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তারা কেউ আমার বাবাকে চিনতেন না। যেসব সাক্ষী ’৭১ সালে তার বাবাকে চিনতেন না, তাদের কথার ভিত্তিতে কিভাবে তার বাবার ওপর অপরাধের দায় বর্তায়?
তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালে সোহাগপুর গণহত্যা নিয়ে সাংবাদিক মামুন-উর- রশিদ ওই এলাকা পরিদর্শন করে ‘সোহাগপুরের বিধবা কন্যারা’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপক্ষের ১১তম সাক্ষী হাসেন বানু, ১৩তম সাক্ষীসহ অনেকের সাক্ষাৎকার সেই বইতে আছে। তারা কেউই সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডে আমার বাবার সম্পৃক্ততার কথা বলেননি। এমনকি বইটিতে যে ১৩৮ রাজাকারের তালিকা দেয়া হয়েছে, তাতেও তার বাবার নাম নেই।
কামারুজ্জামানের ছেলে বলেন, শেরপুর নালিতাবাড়ির মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তালুকদার ২০১১ সালে অনুমপ প্রকাশনী থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধে নালিতাকবাড়ি’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। সেখানে সোহাগপুর গণহত্যার বিস্তারিত বিবরণ থাকলেও কোনো ঘটনার সাথে তার বাবার সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়নি।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বিডিনিউজ২৪ ডটকমের সাবেক কনসালট্যান্ট এডিটর আফসান চৌধুরী ২০১২ সালের ৩০ জুলাই ট্রাইব্যুনালে এই মামলা চলাকালে সোহাগপুর গণহত্যা নিয়ে বিডিনিউজে একটি প্রবন্ধ লেখেন। ওই প্রবন্ধে সোহাগপুর গণহত্যার সাথে জড়িতদের নাম পরিচয় উল্লেখ থাকলেও সেখানে কামারুজ্জামানের নেই।
হাসান ইকবাল বলেন, তার বাবা সোহাগপুরসহ কোনো হত্যাকাণ্ডের সাথে কখনোই জড়িত ছিলেন না। রাজনৈতিক কারণে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে এতে জড়ানো হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আশা করি আপিল বিভাগ এই রায় পুনর্বিবেচনা করে তার বাবাকে বেকসুর খালাস দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।
তিনি বলেন, ঘটনার সময় তার বাবা এইচএসসির ছাত্র ছিলেন। তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। তিনি বাড়িতে অবস্থান করে পড়ালেখা করতেন। সোহাগপুর গণহত্যাসহ কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে তিনি কখনোই জড়িত ছিলেন না।