সুনামগঞ্জ: জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের নয়া চিলাউড়া (দোসনোওয়াগাঁও) গ্রামে খুন হওয়া জগৎ দাস ওরফে কালনের হত্যাকান্ডের সাথে জড়ির দুই জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সোমবার আদালতে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৩ তিন দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেনে। রিমান্ড মঞ্জুরকৃত আসামীরা হলেন, কানাই দাস(২৬), শ্রীবাস দাস (৩০)। তবে এ হত্যাকান্ডের মূল হোতা ইউসি সদস্য অনিল দাস আজও ধরা পড়েনি। প্রেমিক যুগলকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে গত ১৭ অক্টোবর রাতে দূবৃর্ত্তদের হাতে খুন হন জগৎ দাস কালন। এদিকে পরিবারের একমাত উপার্জনকৃত ব্যক্তিকে হারিয়ে অবুঝ সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী কল্পনা রানী দাস এখন নিঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অপরদিকে হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে আসামীরা নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিরাপত্তাহীনতায় অনেকেই গ্রাম ছেড়ে জগন্নাথপুর পৌর শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
জানা যায়, গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্ছার থাকা জগৎ দাসের করুণ মৃত্যুকে নিয়ে পুরো দাসনোওয়াগাঁও গ্রামে চলছে শোকের মাতন। গ্রামবাসী ও নিহতের পরিবারের স্বজনদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে,দাসনোওয়াগাঁও গ্রামের অনিল চন্দ্র দাসের ছেলে সমীরন দাসের সাথে মুঠোফোনে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে শাল্লা থানার শিবপুর গ্রামের বঙ্ক চন্দ্র দাসের মেয়ে (১৬)। দীর্ঘদিনের প্রেমের সর্ম্পকের কারণে মেয়েটি গত ১৬ অক্টোবর ছুঠে আসে প্রেমিক সমীরনের বাড়িতে। এনিয়ে গ্রামে তোলপাড় শুরু হলে বসে বৈঠক। এতে মেয়েটি প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়ায় গ্রামবাসী এবিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না দিয়ে মেয়েটিকে জগৎ দাসের বাড়িতে রাত্রি যাপনের সিদ্ধান্ত দেন। গ্রামবাসীর সিদ্ধান্ত মেনে প্রেমিকা মেয়েটিকে জগৎ দাস আশ্রয় দেন। ১৭ অক্টোবর গ্রামে একটি বিয়ে অনুষ্ঠান চলাকালে একই গ্রামের কবিন্দ্র দাসের নের্তৃত্বে কয়েকজন লোক জগৎ দাসের ভাই অমিরন দাসকে বলেন, তোমরা ৫০ হাজার টাকা দিলে তোর ভাইকে আমরা ওই মেয়েকে বিয়ে পড়িয়ে দিব। এনিয়ে কবিন্দ্র দাস ও অমিরন দাসের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে কবিন্দ্র দাসের নের্তৃত্বে কয়েকজন জগৎ দাসের বাড়িতে গিয়ে মেয়েটিকে বের করে দেয়ার জন্য অশ্লীল ভাষায় ডাকাডাকি করেন। এসময় জগৎ দাস ঘর থেকে বের হয়ে বলেন মেয়ে তার ঘরে নেই। একথা বলা মাত্রই গ্রামের ইউপি সদস্য অনিল চন্দ্র দাসের হুকুমে বিজয় দাস,বলরাম দাস,কানাই দাস, শ্রীবাস দাস জগৎ দাসের ওপর হামালা চালায়। জগৎ দাসের স্ত্রী কল্পনা রানী দাস কান্না জড়িত কষ্ঠে জানান, আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে ঘর থেকে ডেকে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা আমার সর্বনাশ করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
জগৎ দাসের একমাত্র ছেলে চয়ন দাস বলেন, আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। কারণ আমার বাবা গ্রামে সবসময় অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। তাই ইউপি সদস্য অনিল দাসের নের্তৃত্বে তাকে খুন করা হয়।
গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা রনজিৎ দাস বলেন, জগৎ দাস একজন ভালো মানুষ ছিল। তার মৃত্যু গ্রামবাসী মেনে নিতে পারছে না। তার পরিবারের মতো পুরো গ্রামে চলছে শোকের মাতন। আমরা এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার উপ-পরির্দশক রতন দেবনাথ জানান, পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে এঘটনার সাথে জড়িত ১০জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করে। সোমবার আদালত ২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।