ঢাকা: অবশেষে জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম. আসলাম আলম মঙ্গলবার রাইজিংবিডিকে বলেন, অনেক দিন ধরেই এ নিয়ে কথা হচ্ছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি চিঠি দেয়। তাতে জামায়াতে ইসলামির পরিচালনাধীন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, বিষয়টি অবশ্যই মন্ত্রণালয় নজরদারি করবে। সঠিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না- তা তদারকি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা প্রতিনিয়ত অবহিত করবে। কোথাও সমস্যা হলে তা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির অর্থ যোগানদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারি উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলনের শুরু থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির পাশাপাশি জামায়াতের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে। ’৭৫ পরবর্তী সময়ের সরকারগুলোর প্রত্যক্ষ মদদে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু হয়েছে। বিগত সময়ে জামায়াত আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে। আমরা তাদের আর্থিক শক্তি বন্ধ করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সেগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যবহার করার দাবি অনেক দিনের।
তিনি বলেন, সরকার দীর্ঘদিন পরে হলেও জামায়াতের অর্থের উৎস খুঁজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগ আরো অনেক আগে নেওয়া উচিত ছিল। আমরা আশা করব- এ উদ্যোগ শুধু কাগজে-কলমে আবদ্ধ যেন না থাকে। নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঘেষিত রায়ের প্রতিবাদে গড়ে উঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এবং জামায়াতে ইসলামীর অর্থায়নকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত করার দাবি তোলে। দেশে ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবাসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোর মালিকানা জামায়াতে ইসলামীর।
গণজাগরণ মঞ্চ ওই সময় একটি তালিকাও প্রকাশ করে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সারাদেশে অসংখ্য কোচিং সেন্টার, স্কুল-কলেজ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বলে চিহ্নিত করে ওই তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দাবির মধ্যে তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এ নির্দেশ এলো। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়।