ঢাকা: নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আগামী জানুয়ারি থেকে লাগাতার আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু করা আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এর নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে হরতাল দেয়ারও ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২৯শে নভেম্বর কুমিল্লায় ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ শেষে দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। পাশাপাশি আগামী আন্দোলনে জোট নেতাদের রাজপথে নামার অঙ্গীকার করানো হয়। শনিবার রাতে জোটের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে রাত সাড়ে নয়টা থেকে সোয়া এগারটা পর্যন্ত গুলশান কার্যালয়ে জোটের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে শরীকদের কাছ থেকে আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে মতামত জানতে চান তিনি। তারা প্রায় সকলেই টানা আন্দোলনের পক্ষে মত দেন।
জোটের একাধিক নেতা জানান, সরকার আগামী জানুয়ারী মাসের শুরুতে গ্যাস ও জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনসম্পর্কিত এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলা হলে জনগণও তাতে সমর্থন জানাবে। এ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এ ইস্যুতে রাজপথে নেমে তা অব্যাহত রাখতে হবে। ধারাবাহিক কর্মসূচি মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে সরকার পতনের একদফায় রূপ দিতে হবে। সেজন্য সকলকে রাজপথে নামতে হবে। তিনি শরিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, হাসিনাকে না সরানো পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। এজন্য যেকোন ত্যাগ এমনকি জীবন দিতে সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি নিজেও রাজপথে নামার অঙ্গিকার করে বলেন, এরআগে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক যে বৈঠক করেছি সেখানেও তাদের রাজপথে থাকার অঙ্গীকার করিয়েছি। আপনারা নামবেন কিনা? এসময় শরীক দলের নেতারা রাজপথে থাকার অঙ্গীকার করেন।
বৈঠকে জোটের এক শীর্ষ নেতা সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন যে তালিকা করতে যাচ্ছে সে বিষয়ে বলেন, এতে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী অনেককেই বাদ দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও দলীয় বিবেচনায় অনেককে মুক্তিযোদ্ধা বানানো হচ্ছে। এ সম্পর্কে জোটের পক্ষ থেকে জোরালো প্রতিবাদ জানানো উচিত। এসময় খালেদা জিয়া বলেন, চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এর নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে। আলোচনার এক পর্যায়ে বৈঠকে উপস্থিত জামায়াত নেতার উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা যেভাবে হাঁকডাক দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন সেভাবে আপনাদের রাজপথে দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েকটি হরতালে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিলো অনেক কম। ভবিষ্যত আন্দোলনে যাতে নেতাকর্মীরা রাজপথে নামে সে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে অধিকাংশ নেতাই তাদের বক্তব্যে আগামী বিজয় দিবসকে জোটগতভাবে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে পালনের পক্ষে মত দেন। তাদের মতের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে খালেদা জিয়াও। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করে। তারা মনে করে তারাই মুক্তিযুদ্ধের ‘সোল এজেন্ট’। অথচ বিএনপিসহ বিশ দলীয় জোটের মধ্যেই বেশি সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার অবস্থান। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার গড়া রাজনৈতিক দল। সেজন্য বিজয় দিবসকে ঘিরে বিএনপি ও জোটকে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। একই সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে জাঁকজমকভাবে এ অনুষ্ঠান পালন করা হবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া জোট নেতাদের বলেন, বিষয়টি সাধারণ মানুষের মাঝে আরও বেশি করে প্রচার করতে হবে। যাতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো তা মানুষের কাছে আরও স্পষ্ট হবে। বিদেশীরাও ওই নির্বাচন নিয়ে যে অভিযোগ করে আসছিলো তা অব্যাহত রাখে এবং সরকারকে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন দিতে চাপ দেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ২০ দলকে বিষফোঁড়া বলে যে মন্তব্য করেছেন তার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান জোটের নেতারা। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, আসলে ২০ দল নয়, প্রধানমন্ত্রী নিজেই একটা বিষফোঁড়া। তার সারা শরীরেই বিষফোঁড়া।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) টি আই এম ফজলে রাব্বি, জামায়াতে ইসলামীর রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণপার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবারপার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির চেয়ারম্যান গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির একাংশের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা, পিপলস লীগের সভাপতি গরিবে নেওয়াজ, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, ন্যাপ-ভাসানীর অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, ইসলামিক পার্টির সভাপতি আবদুল মোবিন, জমিয়তে উলামায়ের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম উপস্থিত ছিলেন।