মাদারীপুরে নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও সাত-আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
মারা যাওয়া কিশোরী সুমাইয়ার বাবা বিল্লাল শিকদার বাদী হয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে সদর থানায় মামলাটি করেছেন। থানার উপপরিদর্শক বারেক করিম হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে দুই কিশোরী সুমাইয়া আক্তার ও হ্যাপি আক্তারের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সদর উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের এই দুই পরিবারেরই অভিযোগ, ধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এই ঘটনার শিকার ১৪ বছর বয়সী দুই কিশোরী ছিল মোস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় শিপন শিকদার (১৮) ও রফিক শিকদার (২১) নামে দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনার পর দুই পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সুমাইয়া ও হ্যাপি গতকাল বেলা তিনটার দিকে কোচিং করতে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে স্কুলের উদ্দেশে বের হয়। পরে বিকেল চারটা থেকে সোয়া চারটার মধ্যে ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী চার যুবক তাদের অচেতন অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও কর্মচারীরা বলেছেন, সুমাইয়া ও হ্যাপিকে নিয়ে এসে চার যুবক প্রথমে জানান যে তারা বিষ খেয়েছে।
প্রাথমিক চিকিৎসা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে হ্যাপি মারা গেলে ওই চার যুবক পালিয়ে যান। এরপর সেখানে শিপন শিকদার ও রফিক শিকদার নামে দুই যুবক উপস্থিত হলে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা তাঁদের আটক করে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ ওই দুজনকে আটক করে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সুমাইয়াও মারা যায়। এরপর দুই পরিবারের সদস্য, স্বজন ও প্রতিবেশীরা খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন।
সুমাইয়ার বাবা বিল্লাল শিকদার মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে চা বিক্রি করেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সুমাইয়া বড়। সুমাইয়ার বাবা জানান, আটক দুই যুবক সুমাইয়াকে উত্ত্যক্ত করতেন। বিষয়টি তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মিন্টু শিকদারকে জানিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে।
একই অভিযোগ করে হ্যাপির মা মুক্তা বেগম বলেন, আটক হওয়া রফিক তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতেন। বিষয়টি তিনিও মিন্টু শিকদারকে জানিয়েছিলেন। তিন বোনের মধ্যে হ্যাপি বড়। তার বাবা হাবিব খান বাহরাইন প্রবাসী।
সুমাইয়া ও হ্যাপির মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রাত আটটার পর হাসপাতালে উপস্থিত হন মিন্টু শিকদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দুই পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি শিপনের বাবা কুদ্দুস শিকদার ও রফিকের বাবা কামাল শিকদারকে এ বিষয়ে সতর্ক করেন। আর দুই মেয়ের অভিভাবকদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, সুমাইয়ার শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন থাকলেও হ্যাপির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তের পরই ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
লাশ দুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মাদারীপুর সদর থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই)। তিনি বলেন, সুমাইয়ার গলা, হাত ও পায়ের আঙুলে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হ্যাপির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাল একই সময়ে প্রথম আলোকে জানান, ‘মেয়ে দুটি কীভাবে মারা গেল জানার জন্য আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যাঁরা মেয়ে দুটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, তাঁদের পরিচয় জানা গেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, আটক দুই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাঁরা এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন।
সুমাইয়া ও হ্যাপিকে শান্তশিষ্ট স্বভাবের বলে উল্লেখ করেন মোস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান খান। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এ জন্য স্কুলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।