আহমেদ জামাল: স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচনে দুই ধরনের কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে জামায়াত। দলীয় প্রতীক এবং দলীয় পরিচয়ে নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় স্বতন্ত্র অথবা জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে ২০ দলের শরিক দলটি। দলের দায়িত্বশীল সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, ২০দলীয় জোট বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য নানা কূটকৌশল নেয়া হচ্ছে। গণগ্রেপ্তার করে তৃণমূলে নেতৃত্ব শূন্য করা হচ্ছে। ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে মাঠ কর্মী সমর্থকদের শক্তি সামর্থ্য ও মনোবল। কিন্তু তার পরও মাঠ ছেড়ে যাবে না তারা। শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার চেষ্টা করবে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী সমর্থকরা। জনগণ সুষ্ঠু এবং অবাধে ভোটাধিকারের সুযোগ পেলে ফলাফল অনুকূলে যাওয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী দলের নীতিনির্ধারকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জামায়াতের নেতাকর্মীরা যার যার অবস্থান থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হামলা মামলার ভয়ে অনেক দিন আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মী সমর্থকরা জনসম্মুখে আসতে শুরু করেছেন। গোপনে ঘরোয়া বৈঠকও করছেন কেউ কেউ। তবে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান সম্ভাব্য প্রার্থী সমর্থকসহ সংশ্লিষ্টদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।
এ ব্যাপারে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সরকার চায় না পৌরসভা নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ করুক। তারা বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে একদলীয় নির্বাচন করে দলের লোকদের নির্বাচনী বৈতরণী পার করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বৃহস্পতিবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, সরকার ডিসেম্বর মাসে পৌরসভা নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে জামায়াত শিবিরসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে গণহারে গ্রেপ্তার শুরু করেছে। সরকারের এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, তারা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের প্রহসন করে যেমনি দলের লোকদের এমপি বানিয়েছেন, তেমনি পৌরসভা নির্বাচনেও একতরফা ভোটগ্রহণের মাধ্যমে দলীয় লোকদের ক্ষমতায় বসানোর চক্রান্ত করছে। তিনি বলেন, বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে নির্বাচন করাই যদি তাদের লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচনের নামে প্রহসন করার প্রয়োজন কী? জনগণের সঙ্গে প্রতারণা না করে ক্ষমতার বলে দলের লোকদের পৌরসভাগুলিতে বসিয়ে দিলেই হয়। তিনি একদলীয় নির্বাচনের ষড়যন্ত্র বন্ধ করে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পৌরসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধের দাবি জানান।
ওদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক সদস্য বলেন, দলীয় প্রতীক এবং পরিচয়ে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের ঘোষণায় স্বতন্ত্র অথবা জোটবদ্ধ প্রার্থী হওয়া যাবে না-এমন কথা বলা হয়নি। তাই জামায়াতের নেতাকর্মী সমর্থকদের নির্বাচনের বাইরে রাখার কোন সুযোগ নেই। যে কোন উপায়ে যে কোন ব্যানারে জামায়াত নির্বাচনে যাবে এবং এতে উপজেলা নির্বাচনের মতো অপ্রত্যাশিত জয় পাবে বলে তার দাবি।
২০১১ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর থেকে টানা চার বছর জামায়াতের মগবাজার কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে সকল মহানগর, জেলা উপজেলা পর্যায়ে প্রায় সব কার্যালয় বন্ধ। পুলিশ এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হামলা মামলার ভয়ে ঘরে বাইরে কোথাও সভাসমাবেশ করতে পারছে না দলটি। গোপনে ঘরোয়া সভা করতে গিয়েও বারবার ধরা পড়ছেন দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী সমর্থক। এ পর্যায়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াতের জনসম্পৃক্ততা মূলক কাজের গতি বাড়বে এমনটি আশা করছেন অনেকেই।