ঢাকা: জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষে এবং সরকারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যে কোনো রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগকে বিএনপি স্বাগত জানাবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর যৌথসভা শেষে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, সভ্য দেশ হলে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর সরকার পদত্যাগ করত। এ রায় আমলে নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন- দেশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষের যে কোনো উদ্যোগকে আমরা সব সময় স্বাগত জানিয়েছি।
আমরা এখনও মনে করি, এ অবৈধ, অনৈতিক ও নির্যাতনকারী সরকার, জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেবে অবশ্যই তাদের আমরা স্বাগত জানাব।
যৌথসভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক, সহ-সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় দলের সাংগঠনিক অবস্থা, সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি, বন্যা পরিস্থিতি, দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবসসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, দলের সংদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি আরও গতিশীল করার নির্দেশ দেন মির্জা ফখরুল। একই সঙ্গে ইসির সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়। এছাড়া দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস ব্যাপকভাবে করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান এ সরকার অবৈধভাবে, অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় আছে। আপিল বিভাগের যে পূর্ণাঙ্গ রায় বেরিয়েছে, যে কোনো সভ্য দেশ হলে, গণতান্ত্রিক দেশ হলে সরকার পদত্যাগ করত।
পত্র-পত্রিকায় রায়ের যে অংশ পেয়েছি, আমরা দেখেছি যে, রাষ্ট্রের একটি বড় প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রের স্তম্ভ বিচার বিভাগ, তার রায়ে বলা হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই, এ দেশে পার্লামেন্টে নন ফাংশনাল হয়ে গেছে, এ দেশে আইনের শাসন নেই এবং বিচার বিভাগকে তারা (সরকার) নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
মোট কথা সার্বিকভাবে দেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই, ভোটের অধিকার পর্যন্ত নেই। এমনকি একথাও পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, আজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, এ সরকার সর্বোতভাবে ব্যর্থ এবং গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে আছে। আমরা এ সভা থেকে আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা করা হোক। এটা আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এ অবৈধ-অনৈতিক সরকার আর জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। জনগণের রায়ে তারা পরাজিত হবে।
সারা দেশে বন্যা কবলিত দুর্গতদের ত্রাণ প্রদানে সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। সারা দেশে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি বিশেষ করে বগুড়ায় দুই নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।
বিএনপির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি : ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ। আলোচনা সভার সময়সূচি পরে জানানো হবে।
এছাড়াও ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার সময়সূচিও পরে জানানো হবে।
যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মাহবুবুর রহমান শামীম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবু সাইদ খান, নুরী আরা সাফা, মীর সরাফত আলী সপু, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।