নবীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নবীগঞ্জে এক লন্ডনী কন্যাকে সকালে তালাক ও বিকালে বিয়ে নিয়ে সবর্ত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে নবীগঞ্জ সহ আউশকান্দি বাজার এলাকার বিভিন্ন স্থানে রসালো আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনার ঝড় বইছে। নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের আউশকান্দি গ্রামের নজমুল মিয়ার বাড়িতে তার বোন লন্ডন প্রবাসী রুবিনা বেগম ও মেয়ে রুজিনাকে নিয়ে উঠেন। পরদিন থেকে শুরু হয় লন্ডনী ভাগ্নিকে নিয়ে দুই মামার টানাহেচড়া। এক মামা দাবী করছেন তার পুত্র বধু। তার ছেলের সাথে কয়েক বছর আগে ওই ভাগ্নির বিয়ের হয় এই বিয়ের কাবিননামও রয়েছে তাদের কাছে। আর আরেক মামা দেশে ফেরার আগ থেকেই অন্য একটি বর পক্ষের সাথে বিয়ের কথা বার্তা শেষ করে রেখেছেন। এ নিয়ে নাজমূল মিয়ার বাড়িতে দফায় দফায় সালিস বৈঠক বসে।
সালিস বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিগত ৪/৫ বছর পূর্বে লন্ডনী কন্যা রুজিনার মামাতো ভাই আউশকান্দি গ্রামের হাজির মিয়ার ছেলে হায়দার মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর রুজিনার স্বামী হায়দার মিয়া গ্রীস চলে যান। চলতি মাসের ১ নভেম্বর রুজিনাবে নিয়ে মা দেশে আসেন। দেশে আসার পর মেয়েকে নিয়ে মা তার ভাই আউশকান্দি গ্রামে নাজমুল মিয়ার বাড়িতে উঠেন। নাজমুল মিয়া তার ভাগ্নিকে একই এলাকার উমরপুর গ্রামের এক মেম্বারের পুত্রের কাছে বিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১০লাখ টাকা আদায় করেন। সোমবার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এদিকে এ খবর শুনে নাজমুল মিয়ার ভাই হায়দার মিয়ার পিতা হাজির মিয়া গ্রামের লোকজন জড়িত করেন। নাজমুল মিয়ার বাড়িতে এক সালিস বৈঠক বসে। এতে আউশকান্দি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার বদরুল ইসলাম বকুল সহ গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বিগণ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে হাজির মিয়া তার ছেলের সাথে আগে ওই মেয়ের বিয়ে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এ সময় হাজির মিয়ার ভাই নাজমুল মিয়া ১০ লাখ টাকা আনার কথা স্বীকার করেন। এ অবস্থায় উপস্থিত মুরুব্বিগণ ওই ১০লাখ টাকা প্রয়োজনে গ্রামবাসী ফেরত দিবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। পরে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্যগণ লন্ডনী কন্যাকে বুঝিয়ে হায়দার মিয়ার ঘরে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু লন্ডনী কন্যা রোজিনা কিছুতেই হায়দার মিয়ার সংসার করতে রাজি নয়। কি আর করার প্রবাদে আছে “যার বিয়ে তার খোজঁ নাই, পাড়া পড়শির ঘুম নাই”। এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে আবারো বৈঠকে বসেন গ্রামবাসী।
বৈঠকে জানানো হয় রোজিনা হায়দার মিয়ার ঘর-সংসার করতে রাজি নয়। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় রোজিনাকে অন্যত্র বিয়ে দিতে হলে হায়দার মিয়া তালাক দিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় সালিশ বৈঠকে। পরদিন বুধবার সকালে গ্রীস প্রবাসী স্বামী হায়দার মিয়াকে জানিয়ে দেয়া হয় তার স্ত্রীর আর ঘর সংসার করতে রাজি নয়। সে অন্যত্র বিয়ের পিড়িতে বসতে যাচ্ছে! এত কিছু শুনে হায়দার মিয়া আর চাপাচাপি করতে রাজি নয়। তাই গ্রীস থেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তালাক দেওয়া হয় রোজিনাকে। পরে আউশকান্দি মাহবুবা কমিউটি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় রোজিনাকে। এর কিছুক্ষন পরেই মাতায় পাগড়ি, গায়ে শেরুয়ানি পড়ে সেন্টারে হাজির হয় হবু স্বামী তারেক। এরপর ৫লক্ষ টাকার দেন মোহরে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হয় রোজিনা ও তারেককে। এ নিয়ে নবীগঞ্জ সহ আউশকান্দি এলাকায় চুলছেড়া বিশ্লেষন চলছে। লন্ডনী কন্যার বাবার বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বলে জানাগেছে।