ডেস্ক রিপোর্ট: বসবাস করেন বৃটেনে। রাজনীতিও ওখানে। পার্লামেন্টের নির্বাচনও সেখানে হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন সিলেট থেকে। আর বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেটবাসীর দোয়া নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামলেন মিনা রহমান। বললেন, ‘নিজের স্বজনদের ভোলা যায় না। সিলেটের মানুষই আবার সব। এ কারণে সিলেটের মানুষের দোয়া নিয়েই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলাম। সিলেটের মানুষের দোয়া থাকলে আমার বিজয় হবেই।’ বৃটেনের ছায়া মন্ত্রী রুশনারা আলীর পর সিলেটের আরেক নারী মিনা রহমান ২০১৫ সালে অনুষ্ঠেয় বৃটেন পার্লামেন্টের এমপি প্রার্থী হচ্ছেন। ইতিমধ্যে তার দল কনজারভেটিভ পার্টি তাকে বর্ণবাদীদের এক সময়ের ঘাঁটি বার্কিং এলাকা থেকে প্রার্থী করেছে। এর আগে মিনা রহমান এ আসনে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে কাজ করেন। এছাড়া এ আসনে ভিনদেশী ভোটারদের আধিপত্য থাকায় ইংরেজরা তাকে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছে।
গ্রেটার লন্ডনের বার্কিং নির্বাচনী আসন। এর আগে কখনওই এ আসন থেকে বাঙালি কেউ প্রার্থী হয়নি। এবার কনজারভেটিভ পার্টি মিনা রহমানকে এখান থেকে প্রার্থী করেছে। এই আসনে এথনিক ভোটাররা বড় ফ্যাক্টর। এখানে বিপুল সংখ্যক মাইগ্র্যান্টরাও বসবাস করেন। এর মধ্যে ২০ হাজার রয়েছে আফ্রিকান ও ক্যারিবিয়ান, ৭০০০ বাংলাদেশী, ১০ হাজারেও বেশি পাকিস্তানি এবং ৫ থেকে ৭ হাজারের মধ্যে ভারতীয়দের বসবাস। এই আসনের মাইগ্র্যান্ট ভোটাররা মনে করেন, দল কোন বড় নয়, এখানে মাইগ্র্যান্ট কমিউনিটি থেকে প্রার্থী হওয়া প্রয়োজন। এ কারণে মিনা রহমান প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হওয়ার পর গতকালই প্রথম সিলেটের মাটিতে পা রাখেন তিনি। এরপর সিলেটে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। মিনা রহমান জানিয়েছেন, ‘সিলেট আমার জন্ম স্থান। আউল-বাউলের এই পবিত্র ভূমি থেকে আপনাদের দোয়া নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে চাই।’ সংবাদ সম্মেলনে মিনা রহমান বলেন, ‘মাত্র ২১ দিন বয়সে লন্ডনে পাড়ি জমালেও আমি কখনও শিকড় থেকে বিচ্যুতি হইনি। এজন্য নিজেকে একজন বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করছি। এ কারণে ওখানে বাঙালি কমিউনিটির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’ মিনা রহমান কনজারভেটিভ পার্টি থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বৃটেনে মাইগ্র্যান্টদের জন্য বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য কাজ করছে কনজারভেটিভ পার্টি। অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও কনজারভেটিভ পার্টি চাকরিসহ জনকল্যাণের সুবিধাকে আরও প্রসারিত করছে। ১০ হাজার পাউন্ডের নিচে যাদের আয় তাদের ট্যাক্স মওকুফ করেছে। পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি স্কিম হাতে নিয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি।’ এ পার্টি বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করছে- এমন তথ্য জানিয়ে মিনা রহমান জানান, ‘সোশাল অ্যাকশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষা, পরিবেশ উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে মায়া এবং শাপলা নামে দু’টি প্রজেক্টের মাধ্যমে সেবামূলক কর্মকা- চালাচ্ছে কনজারভেটিভ পার্টি।
মিনা রহমান তার নির্বাচনী এলাকার কথা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘বর্ণবাদের ঘাঁটি হলেও বার্কিং এলাকা নিয়ে লেবার পার্টি কোন কাজ করেনি। গত এক বছরে আমার প্রচেষ্টায় বেশ কিছু কাজ হয়েছে। বার্কিং অ্যান্ড ডাগেনহ্যম কাউন্সিল কর্তৃক ব্রানমেড রোডের ফ্যান্সওয়ে কমিউনিটি সেন্টারটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াই এবং আন্দোলন করি। এ নিয়ে টাউন হলে স্মারকলিপি প্রদান করি। আন্দোলনের মুখে এক পর্যায়ে দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের আশ্রয়স্থল ওই সেন্টারটি রক্ষা পেয়েছে।’ নির্বাচিত হলে ভবিষ্যতে বাঙালি কমিউনিটির জন্য কাজ করবেন বলে জানান মিনা রহমান। সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সাংবাদিকরা ছাড়াও প্রবাসী গীতিকার হিমাংশু গোস্বামী ও ভাতগাঁও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রউফ উপস্থিত ছিলেন।