Home গল্প মানুষের ব্যবহারের অন্যতম মধ্যম ভাষা

মানুষের ব্যবহারের অন্যতম মধ্যম ভাষা

1700
0

রুদ্র মুহাম্মদ বশির: আমরা দৈনন্দিন সমাজ জীবন পরিচালনার জন্য একে অন্যের সাথে কথা বলি। কেউ কম কথা বলে কেউবা বেশি কথা বলে। কিন্তু এই কথা বলার ধরন একেক জনের একেক রকম। কথা বলার আদব হলো- কম কথা বলা, আস্তে আস্তে বলা, মার্জিত শব্দ ব্যবহার করা। চিৎকার চেঁচামেসি না করা, অশ্রাব্য শব্দ ব্যবহার না করা, কাউকে কটাক্য করে কথা না বলা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বা গাড়িতে লেখা থাকে, ব্যবহারে বংশের পরিচয়।

কেউ যদি অশালীন ব্যবহার করে, অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে, তাহলে মানুষ এমনিতেই বুঝতে পারে, তার অবস্থান কোথায়? প্রবাদ আছে, জন্ম হোক যথায় তথায় কর্ম হোক ভালো। কার কোথায় কীভাবে জন্ম হলো, সেটা বিবেচ্য নয়, বিবেচ্য হলো কার আচরণ কেমন ? আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ রয়েছে, যারা মানুষের সাথে অমার্জিত ভাষায় কথা বলে, বিশ্রী শব্দ ব্যবহার করে, খুব চিৎকার চেঁচামেসি করে। মানুষ খুবই রাগান্বিত হয় এবং সামনা সামনি না বললে পিছুনে মন্দ বলে, অনেক সময় রাগও করে। আমরা যারা উঁচু তলায় থাকি, কখনও কি সাধারণ মানুষের খবর রাখি?

তাঁরা এতো কষ্ট করে, এতো পরিশ্রম করে শুধু দুমুটো ভাতের জন্য। আমরা কেন তাদের সাথে অশালীন আচরণ করবো? উত্তেজিত হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেবো। মনে রাখা প্রয়োজন, হয়তো আমি বা আমাদের কেউ গরিব বা সাধারণ মানুষ হতে পারে, তখন আমার কেমন লাগবে? আবার অনেক শিক্ষিত মানুষ আছে, যারা তাদের অধীনস্থ লোকদের সাথে অশালীন ভাষায় কথা বলে, অন্যায় আচরণ করে। আমি একটা বিষয় বুঝে উঠতে পারিনা, সুন্দর আচরণ করলে সমস্যা কোথায়? এতে করে মানুষ ছোট তো হইনা, বরং তার মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পায়। সে প্রসংশার পাত্র হয়। পিছনে মানুষ তার গুণের কথা বলে বেড়ায়। সুন্দর করে কথা বলা শুধু ভাষাগত সৌন্দর্য বাড়ায় না,এটা একটা আর্ট বা শিল্প।

আমার ছাত্র জীবনে একজন মহৎ শিক্ষক পেয়েছিলাম,উনি সব সময় কম কথা বলতেন, যা বলতেন খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুজিয়ে বলতেন। আমি অনেক সময় ভাবতাম, আমি যদি স্যারের মত কথা বলতে পারতাম! আর উনি বিনয়ি ছিলেন। আরেকটি কথা বলি,আমার আরো একজন শিক্ষক ছিলেন, উনি খুব কর্কশ ভায়া কথা বলতেন। আমি পারতো পক্ষে, উনার কাছে যাইতাম না। আমার বাবা বলতেন, সব সময় আস্তেআস্তে কথা বলার জন্য। রাগ করা বা উত্তেজিত হয়ে কথা বলা, উনি সব সময় বারণ করতেন। আর অশ্রাব্য ভাষা তো প্রশ্নই উঠেনা।

আর আমরা যাঁরা শিক্ষকতা করি, তাঁদের উচিত, সব সময় পরিশীলিত ও মার্জিত শব্দ ব্যবহার করা। কারণ তাদের কাছ থেকে কোমল মতি শিক্ষার্থীরা শিখবে। কোনো মতেই তাঁরা অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়। মানুষের ভাষার ব্যবহার পরামিত ও শিষ্টাচারপূর্ণ হলে সে প্রসংশার পাত্র হয়। মানুষ তাকে অনুকরণ করে। মানুষ হয়ে কোনো মানুষের কাছ থেকে অশ্রাব্য ভাষা কাম্য হতে পারেনা। এতে মানুষ কষ্ট পায়। কোনো মানুষ কারও কাছ থেকে কষ্ট পেলে, অতি সহজে তা যায়না। এ কথা সবার বেলা প্রযোজ্য।

আমাদের নিজেদের জন্য হলে, সুন্দর আচরণ, সুন্দর ব্যবহার ও মার্জিত ভাষা প্রয়োগ করা উচিত। পরিশেষে বলবো,আজ যে আমার কাছে আছে, কাল সে আমার কাছে নাও থাকতে পারে, কিন্তু সে দূরে গেলেও আমার সাথে উঠা-বসা, আমার ব্যবহার সবকিছু তার মনে থাকবে। আমার আচরণ যদি সুন্দর ও মার্জিত হয়ে থাকে অনন্তকাল মনে রাখবে। দোয়াও করবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ- সিলেট ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ।

Previous articleসুনামগঞ্জের সীমান্তে বিদেশি মদ সহ দুই মাদক চোরাকারবারী আটক
Next articleব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর অভিনেত্রী জয়া আহসান