ঢাকা: ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জানাজায় দেশে ও প্রবাসে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বুধবার রাত সোয়া আটটায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ সময় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যতদিন বাঁচবো এদেশের মানুষের সঙ্গেই থাকবো।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমার এবং মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর আকষ্মিক অকাল মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই মা হিসাবে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মানসিকভাবে বিপর্যন্ত।
বিবৃতিতে বলা হয়, ছেলে আরাফাত রহমান কোকো রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়নি। ক্রীড়াঙ্গণের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলো। শুধুমাত্র জিয়া পরিবারের একজন সদস্য হওয়ার কারণেই তাকে নানমুখী জুলুম-নির্যাতন, হেনস্তা-অপপ্রচারের শিকার হতে হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, অসুস্থ হয়ে প্রবাসে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেও সে চরম প্রতিহিংসামূলক বৈরিতা থেকে নিষ্কৃতি পায়নি।
ভাগ্যের এমনই নিষ্ঠুর পরিহাস যে, মা হিসাবে তিনি (খালেদা জিয়া) প্রায় আট বছর ধরে এ অসুস্থ সন্তানের মুখ দেখার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছিলেন। অবশেষে তাকে সন্তানের লাশ গ্রহণ করতে হলো। এসবের জন্য তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে বিচারের ভার অর্পণ করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, এই গভীর বেদনা ও শোকের মুহূর্তে সকলের কাছ থেকে যে বিপুল সহানুভূতি, সহমর্মিতা এবং সমবেদনা পেয়েছি তা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। কুয়ালালামপুরে কোকোর প্রথম নামাজে জানাজায় অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নেমেছিল সেজন্য তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
অন্যান্য দেশেও প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহণে গায়েবানা জানাজার আয়োজনের জন্য তিনি আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানান।
দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী-সংগঠন, ২০ দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সমাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কোকোর রূহের মাগফিরাত কামনায় গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করায় বেগম খালেদা জিয়া তাদেরকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান।
‘জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর জানাজার নামাজে দলমত, শ্রেণিপেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ শরীক হয়ে যে অবস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তাতে তিনি গভীরভাবে অভিভূত হয়েছেন। এজন্য বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, জিয়া পরিবারের প্রতি গণমানুষের অপরিমেয় ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ তাকে আরো একবার নতুন করে কৃতজ্ঞতার ঋণে আবদ্ধ করলো। বিপুল সংখ্যক মানুষের এ উপস্থিতিতে তিনি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিবি বলেন, শোক কাটিয়ে ওঠে শক্তি সঞ্চয়ে সর্বস্তরের দেশবাসীর এ অংশগ্রহণ তাকে অনেক সাহায্য করবে।
বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের নেতৃবৃন্দের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, তার এ দুঃখের সময়ে তারা শোকবার্তা পাঠিয়ে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। এজন্য তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
বিএনপি ও ২০ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-জোটের নেতাকর্মী, পেশাজীবী, নাগরিক সমাজের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক অঙ্গণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্ববর্গসহ নরনারী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়স নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ তার কার্যালয়ে এসে শোক প্রকাশ ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করায় তিনি তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তারা এ সময়ে তার সঙ্গে দেখা করতে না পাড়ায় তিনি গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতির বিবেচনায় সকলেই এ বিষয়টিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন বেগম খালেদা জিয়া। বিবৃতিতে খালেদা জিয়া ছোট ছেলে কোকোর জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।