নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সংস্কার নিয়ে আগামী সপ্তাহেই বড় ধরনের ঘোষণা আসছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাহী আদেশে প্রথম দফায় অন্তত ৫০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর বৈধতা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে রিপাবলিকানদের বিরোধিতা সত্ত্বেও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ ওয়াশিংটনের রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউসের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসসহ অন্যান্য পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই অভিবাসন সংস্কার নিয়ে ওবামার ঘোষণা আসতে পারে।
এশিয়া সফর শেষে রবিবার দেশে ফিরবেন ওবামা। এক সপ্তাহ আগে তিনি আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে এ বছর শেষ হওয়ার আগেই অভিবাসন সমস্যার সমাধান তিনি করতে চান।
রিপাবলিকানদের ক্রমাগত বিরোধিতার কারণে অভিবাসন নিয়ে কংগ্রেসে এখনই কোনো আইন বা প্রস্তাব গ্রহণের সম্ভাবনা নেই। একই সঙ্গে নানা সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি বিবেচনায় অভিবাসী এবং উদারনৈতিক গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে এ নিয়ে প্রেসিডেন্টের ওপর রাজনৈতিক চাপও প্রচণ্ড। হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়,অভিবাসন-সমস্যা নিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাহী আদেশটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সংবাদমাধ্যমে আসা তথ্যে জানানো হয়, নির্বাহী আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে—এমন সব সন্তানদের পিতা-মাতার অবৈধতার অবসান ঘটবে। অনেকে পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর আর ফিরে যাননি। অনেকে নানা পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর বিয়ে করেছেন, লিভ টুগেদার করেছেন, সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এসব লোকজনের সন্তানেরা জন্মসূত্রেই এ দেশের নাগরিক। এসব সন্তানের পিতা-মাতারা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে বৈধতার সুযোগ পাবেন। ব্যাপক সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশিও রয়েছেন এ দলে।
অভিবাসন সংস্কার নিয়ে ওবামার নির্বাহী আদেশের দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে এমন লাখো অবৈধ অভিবাসী।
মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, নির্বাহী আদেশের এ অংশের কারণেই প্রায় ৩৩ লাখ অবৈধ অভিবাসীর বৈধতা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। নির্বাহী আদেশে পিতা-মাতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বৈধতা দেওয়ার বিধান থাকবে। ফলে আরো ১০ লাখেরও বেশি লোক বৈধতা পাবেন।
অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে যাদের প্রযুক্তিগত যোগ্যতা রয়েছে, নানা ক্ষেত্রে যারা দক্ষ কর্মী হিসেবে বিবেচিত হবেন, তাদেরও বৈধতা দেওয়া হবে। আদালত কর্তৃক বিতাড়নের শিকার (ডেপোর্টেশন) অবৈধদের কথাও নির্বাহী আদেশে থাকবে।
অবৈধ অভিবাসনের সময় যারা গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তাদের দ্রুত দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে। সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। সীমান্তরক্ষীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থাকে জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বৈধতার জন্য উৎসাহ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে অভিবাসন আবেদনের ফি কমানো হবে। বর্তমানে প্রতি আবেদনের জন্য ৬৮০ ডলার ফি দেওয়া হয়। নির্বাহী আদেশে প্রথম ১০ হাজার আবেদনকারীর জন্য ফি অর্ধেক করা হতে পারে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর কংগ্রেসের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন রিপাবলিকানদের হাতে। রক্ষণশীল আইনপ্রণেতাদের পক্ষ থেকে অভিবাসন সংস্কার নিয়ে তড়িঘড়ি না করতে ওবামার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে অবৈধদের বৈধতা দেওয়ার পরিণাম ভয়াবহ হবে বলে রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
স্পিকার জন বয়েনার বৃহস্পতিবার বলেন, নির্বাহী আদেশে অভিবাসন সমস্যা সমাধানের যেকোনো প্রয়াসের বিরোধিতা করবেন রিপাবলিকানরা।