ঢাকা: গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যরা। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ করে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার না করার তীব্র নিন্দা জানান। অবিলম্বে লতিফ সিদ্দিকী গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি জানান এমপিরা। একই সঙ্গে কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, সে বিষয়ে সংসদে ৩০০ বিধিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করা হয়। এছাড়া লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়টিও স্পিকারের দায়িত্বে রয়েছে বলে সংসদ সদস্যরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, নিউ ইয়র্কের এক সভায় পবিত্র হজ, মহানবী (সা.) ও তাবলিক জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। এরপর দেশে তার গ্রেপ্তার দাবি জোরাল হলে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি।
এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অন্তত ২২টি মামলা হয়। বেশ কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে অদালত। পরোয়ানা মাথায় নিয়ে গতকাল রবিবার রাতে দেশে ফেরেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
সোমবার সংসদ অধিবেশনে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর ৭১ বিধির নোটিশের আলোচনার পর পয়েন্ট অব অর্ডারে লতিফ সিদ্দিকী প্রসঙ্গে সংসদে উত্তেজনা দেখা দেয়।
জাতীয় পার্টির এমপি জিয়া উদ্দিন বাবলু ফ্লোর নিয়ে এই প্রসঙ্গের সূচনা করেন। এরপর স্বতন্ত্র সদস্য হাজি মো. সেলিম, রুস্তম আলী ফরাজী, বিএনএফের চেয়ারম্যান একে এম আবুল কালাম আজাদ ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বক্তব্য রাখেন।
সরকার আশ্রিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী ধর্মের ওপর আঘাত করেছেন। আমরা কোনো ধর্মের ওপর আঘাত দেয়াকে সমর্থন করি না। লতিফ সিদ্দিকী ধর্মের ওপর আঘাত করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওয়ারেন্ট রয়েছে। তারপরও তিনি কিভাবে দেশে প্রবেশ করলেন?’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেখানে দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করলেন, সেখানে লতিফ সিদ্দিকী কিভাবে দেশে আসতে পারলেন? কিভাবে যেখানে ইচ্ছা যেতে পারছেন? তাকে কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না?’
বাবলু সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে মৌলবাদীরা যাতে রাজনীতি করতে না পারে, সেজন্য তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত, গ্রেপ্তার করা উচিত। লতিফ সিদ্দিকী মৌলবাদীদের পক্ষে কাজ করেছেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হোক।’
এরপর হাজি সেলিম বলেন, ‘বিমানবন্দরে ৭/৮টি গোয়েন্দা সংস্থা, এতো লোক থাকতে লতিফ সিদ্দিকী কিভাবে সুন্দর করে বের হয়ে গেলেন? গোয়েন্দারা কেন দেখতে পায় না?’
তিনি বলেন, ‘মানুষ বলছে- লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরায় সরকারের গ্রিন সিগন্যাল আছে। কিন্তু তার প্রশ্নই আসে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী তাকে দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করেছেন।’
লতিফ সিদ্দিকী কিভাবে বিমানবন্দর থেকে বের হলেন, তা তদন্ত করে বের করারও দাবি জানান মহানগর আওয়ামী লীগের এই নেতা।
রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী বিদেশে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে বিপদে ফেলেছেন। দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। তিনি কোন সাহসে দেশে ফিরে এলেন? তিনি দেশে ফিরে নৈরাজ্য ফিরিয়ে আনতে চাইছেন।’
তিনি বলেন, ‘তার দেশে ফেরায় মৌলবাদী হেফাজতরা আল্টিমেটাম দেবে। তার বিরুদ্ধে ২২টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। যে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা যায়। তিনি এমপি আাছেন কিনা স্পিকারকে জানাতে হবে। সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে বলব- ধর্ম অবমানননার আইন, প্রয়োজনে ব্লাসফেমি আইন পাস করতে হবে। বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখলে চলবে না।’
এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে যেন সংসদ নেতা একটি বক্তব্য দেন। তারপর স্পিকার এ ব্যাপারে তার মতামত দিতে পারবেন।’
তবে এসব বক্তব্যের পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কোনো মন্তব্য না করে দিনের অন্য কার্যসূচিতে চলে যান।