Home কলাম শিশু সাঈদ হত্যা: এক নির্মম ট্রাজেডি

শিশু সাঈদ হত্যা: এক নির্মম ট্রাজেডি

1012
0

SAYEED
শাহিদ হাতিমী: পৃথিবীর বুকে আকর্ষণীয় দৃশ্য কোনটি? আমার জানা মতে মেরুদন্ডে ব্যাগ ঝুলিয়ে শিশুদের স্কুল-মাদরাসায় যাতায়াতের দৃশ্য। সম্ভবত এমন দৃশ্যে মুগ্ধ হয়ে জ্ঞানীরা বলেছিলেন- শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। যারা শিক্ষার্থীদের প্রাণ কেড়ে নেয়, যারা নিস্পাপ কোমলমতী শিশুদেরকে গলাটিপে হত্যা করে, তারা কি মানুষ? না তারা মানুষ হতে পারেনা। এদেরকে অমানুষ বলা যায়। এরা মানুষ জাতির কলঙ্ক।
আবু সাঈদ। ফুটফুটে তরতাজা এক শিশু। পত্রিকার পাতায় দেখা মায়াবী আকর্ষণের সাঈদের ছবিটি যেন চোখের আড়াল হচ্ছেনা। এত অল্প বয়সী শিশুর কি এমন অপরাধ? কেন তাকে হত্যা করা হলো? সাঈদের অভিশাপ থেকে এ সমাজ মুক্তি পাবে কি? যারা সাঈদকে হত্যা করল, তারা কি কোন সন্তানের পিতা নয়? যতই বলা হোক অর্থের লোভ আর চিনে ফেলায় সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে, তথাপি সাঈদ যে নিস্পাপ এতে কারো সন্দেহ আছে কি?
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাঈদ বড়জোর বয়স দশ হবে। মাতা-পিতার কত হাজারো স্বপ্ন ছিল ছেলে সাঈদকে নিয়ে। হয়তো সাঈদ একদিন বাংলাদেশের গর্বিত কেউ হতে পারতো। সিলেটবাসী হয়ত একদিন সাঈদের মতো মেধাবী শিশুকে নিয়ে অহংকার করত। কিন্তু না, তা আর হলোনা। এ সমাজ বড় নিষ্ঠুর।
বহির্বিশে^ শিশুদেরকে মারপিঠ তো দূরর কথা, অপ্রাপ্ত বয়সে কোন প্রকার কটুকথা বললেও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। মুখোমুখি হতে হয় নানা প্রশ্নের। কখনো কখনো প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্কুল ছাত্রদের গাইড দেওয়াকে সৌভাগ্য মনে করেন। শিশুদের প্রিয় হওয়াকে অনেক বড় অর্জন মনে করেন। আর আমাদের দেশে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আচরণ নিতান্তই প্রশ্নবিদ্ধ। অবাক হতবাক লেগেই থাকে। ক্ষমতাসীন সরকারের বিশাল শক্তি পুলিশ। আর এই পুলিশের কনস্টেবল সরাসরি একটি শিশুকে অপহরণের সাথে জড়িত। ক্ষমতাসীন দলের (ওলামালীগ) জেলা শাখার সেক্রেটারীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল হয়েও শিশুটিকে হত্যার সময় দরোজা পাহারা দেয়, মুক্তিপণ দাবি করে, এ কেমন দেশে বাস করছি আমরা!
সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ হযরত শাহমীর রাহ. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সাঈদ। সে উক্ত স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। সাঈদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার খাসিলাপাড়ায়। সাঈদের পরিবার নগরীর রায়নগর আবাসিক এলাকার দর্জিপাড়াস্থ বসুন্ধরা ৭৪ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতো।
ক্ষমতাসীন দলের কর্তারা এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে কিভাবে দেখবেন? সাঈদ হত্যার ব্যাখ্যা কী দেবেন? শিশু সাঈদ ২০ দলীয় জোটের বানানও হয়তো শিখেনি। পুলিশতো জনগণের বন্ধু। র্যা ব তো মানুষের কল্যাণকামী বিশেষ ফোর্স। তবে কি সাঈদ হত্যাকারীরাও বন্ধু? ক্ষমতাসীনরা আর কত ক্ষমতার বড়াই করবেন? একটি শিশুকে হত্যা করাই কি ক্ষমতার বহিপ্রকাশ? পারবেন কি সাঈদকে ফিরিয়ে দিতে তার মায়ের কোলে?
১৫ মার্চ রোববার ও ১৬ মার্চ সোমবার স্থানীয় পত্রিকার ভাষ্য মতে ‘চিনে ফেলায় সাঈদকে হত্যা’ শিরোনাম চোখে পড়ে। যা পড়ে মনুষ্য সমাজ ও মানবিকতা সম্পর্কে একটি অচেনা দৃশ্য মানসপটে ভেসে ওঠে। বিবেক নাড়া দেয়। সূত্র মতে পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর, র্যা বের সোর্স গেদা মিয়, জেলা ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব, প্রচার সম্পাদক মুহিবুল ইসলাম শিশুটি হত্যায় জড়িত। যে দেশের পুলিশ, র্যা ব ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হাতে একটি দশ বছরের শিশু নিরাপদ নয়, সে দেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারবেন কি এই ক্ষমতাসীনরা? সিলেটবাসী আতঙ্কিত। আতঙ্কে রয়েছেন সিলেটের শিশু সন্তানের পিতা-মাতারাও। কখন জানি গুম, অপহরণ হয়ে যায় কোলের শিশুটি, এমন হতাশা অনেকের চয়নে। শিশু সাঈদ হত্যা এক নির্মম ট্রাজেডি। এর আগেও সরকারের অবহেলায় শিশু জিয়াদের মৃত্যুবরণ ট্রাজেডিটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এভাবে আর কত?
সাঈদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়। প্রিয় সাঈদ! তোমার অকাল প্রয়ানে আমরা শোকাহত। আমরা অনুতপ্ত। আমরা জানি তুমি জান্নাতি। জান্নাতের শিশুদের সাথে এখন তুমি মিতালী করছো। তুমি সুখী-চির সুখের ঠিকানায় চলে গেছো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নরপশুদের সবাই এখনও গ্রেফতার হয়নি। এখনো তোমার হত্যার বিচার শুরু হয়নি। জানি তোমার আত্মা বলছে হত্যাকারীদের ফাঁসি হোক। যাতে করে তোমার ন্যায় আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। কোনো স্কুল শিশুকে যেন আর কেউ গুম, অপহরণ করতে না পারে। হ্যাঁ আমরাও চাই এদের বিচার হোক এবং প্রকাশ্যে হোক। তোমার মায়ের কান্না থামছে না। থামারও নয়। তোমার আত্মীয়-স্বজনরা আতঙ্ক আর হতাশায় দিনাতিপাত করছেন। আমরা তাদেরকে ধৈর্য্যধারণের কথা বলা ছাড়া কি আর বলতে পারি? নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের পাশে থাকেন। তোমার জীবদ্ধশায় রাজধানীতে জিয়াদ মারা গেল। জিয়াদ মারা যাওয়ার পিছনে কারা দায়ী? হয়তো তুমি টিভির পর্দায় শুনেছিলে-দেখেছিলে। আমরা নিরীহ মানুষ। তোমার পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং তোমার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ আসন দানের মোনাজাত করা ছাড়া কি আর করতে পারি? আমাদের ক্ষমতা নেই। র্যা ব, পুলিশও নেই। তবুও সাধ্যমত তোমার হত্যার প্রতিবাদ করছি। হত্যাকারী অমানুষদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
প্রিয় সাঈদ! তোমাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার আল্লাহর কাঠগড়ায় অবশ্যই হবে। তোমাকে হত্যার নির্মম ট্রাজেডি আমরা ভুলতে পারছি না। সিলেটবাসীর হৃদয়ে এমন ঘটনায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমাদের এই সমাজ, বর্তমান সরকার বড় হতভাগা।
প্রিয় সাঈদ! পারলে তুমি আমাদের ক্ষমা করিও। তুমি মামার বাড়ি যেতে পারোনি ঠিক, কিন্তু আল্লাহর বাড়ি চলে গেছ-স্বর্গে আছো এতে কোন সন্দেহ নেই।
লেখক: কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক-পুস্পকলি সাহিত্য সংঘ, সিলেট।

Previous articleচলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান করুন: বুলু
Next articleভারতের ব্যাটিং সামলানোই আসল চ্যালেঞ্জ: মাশরাফি