
ঢাকা: সিটি নির্বাচনের প্রচারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কালো পতাকা প্রদর্শন ও চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করাকে অনভিপ্রেত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং উস্কানিমূলক বলে অভিহিত করেছে বিএনপি। এসব বন্ধ করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানিয়ে দলটি অভিযোগ করেছে বিরোধী দলের প্রার্থী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য নির্বাচনী পরিবেশকে উত্তপ্ত করছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের শীর্ষ নাগরিক হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্রকেই আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, গতকাল রোববার সরকার প্রধান বলেছেন, বাস পুড়িয়ে খালেদা জিয়া এখন বাস মার্কায় ভোট চাচ্ছেন কীভাবে? কেবল তাই নয়, উত্তরায় বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্বাচনী প্রচারণাকালে শাসকদলের কর্মীরা কালো পতাকা প্রদর্শন করে তার প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। তার গাড়িবহর আটকিয়ে স্বাভাবিক চলাচলে বাঁধা প্রদান করেছে।
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, আমরা মনে করি এসব তৎপরতা অনিভিপ্রেত, উস্কানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর মাধ্যমে সরকার নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশকে উত্তপ্ত পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। একইসাথে সিটি নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবিও জানান তিনি।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান, বিএনপি নেতা আফজাল এইচ খান, জহিরুল ইসলাম শাহজাদা মিয়া, আনোয়ার হোসাইন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শামীমুর রহমান শামীম, শামসুল আলম তোফা, তকদির হোসেন জসিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, আমরা শান্তি চাই। কার্যকর রাজনৈতিক সমঝোতা চাই। কিন্তু সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা যেভাবে সিটি নির্বাচনকে নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের উচিৎ হবে নির্বাচনী পরিবেশ যাতে উত্তপ্ত না হয়, সে ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের সর্তক করে দেয়া।
তিনি অভিযোগ করেন, গতকাল রোববার বেগম জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় শাসকদলের কালো পতাকা প্রদর্শন, তার গাড়িবহরে চলাচলে বাঁধা প্রদানের পর আজ সকালে গুলশানের বাসা থেকে পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এই তিনটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। এটি ইঙ্গিতপূর্ণ। তবে তিনি ঠিক নিশ্চিত নন যে, রুটিন মাফিক পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে কি-না? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।
সোমবার ভোরে গুলশানের ৭৯ নং সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নেয়া হয়। গত ৫ এপ্রিল খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বাসায় ফিরে এলে একদিন পর পুলিশি নিরাপত্তা দেয় ডিএমপি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে রাষ্ট্রীয় কোনো প্রটোকল না পেলেও তার নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একজন প্রধান ব্যক্তি তিনি। শীর্ষ পর্যায়ের নাগরিক। যদিও তিনি বর্তমানে রাষ্ট্রের কোনো পদে নেই। তারপরও তার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে রাষ্ট্রকেই ভাবতে হবে। একজন হাই প্রোফাইলের ব্যক্তি হিসেবে তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেয়া সরকারের উচিৎ।
সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের সমালোচনা করে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বেগম জিয়া নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দিয়ে ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন’ তোফায়েল আহমেদের এই বক্তব্য সঠিক নয়। আমরা আশা করব, তোফায়েল সাহেবের মতো সিনিয়র রাজনৈতিক নির্বাচনী আইন ভালোভাবে জেনে বক্তব্য দেবেন। কারণ বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে রাষ্ট্রের কোনো পদে নেই। তিনি বিরোধী দলীয় নেতাও নন। তিনি একজন সাধারণ নাগরিক। বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে তিনি তার দলের প্রার্থীর সমর্থনে ভোট চাইতেই পারেন। আমরা মনে করি মন্ত্রীরা দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনী পরিবেশকে বিষোদগার করছেন।