স্টাফ রিপোর্টার: সৌদি আরবে কর্মী যাওয়ার জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দেশটি থেকে ডিমান্ড (চাহিদা) আসলে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি। রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরবে যাওয়ার সময়সীমা নেই। সৌদি আরবে যেসব গৃহকর্মী যাবে, তাদের আলাদা নিবন্ধন করতে হবে। তবে এখনও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সরকার চালু করেনি। সাধারণ নিবন্ধন প্রক্রিয়াই চলছে। কখনও বলা হয়নি সৌদি আরবের জন্য রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে।’
রেজিস্ট্রেশন শুরু না হলে সৌদি আররে যেতে ইচ্ছুকদের নিবন্ধনের তথ্য জানিয়ে পত্রিকায় জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বিজ্ঞাপন দিয়েছে কেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তিতে তো শুধু সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য নাম নিবন্ধনের কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছিল সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশের কথা।’
গৃহকর্মীদের বেতন কম দেওয়া প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই গৃহকর্মীদের বেতন ৮শ’ রিয়ালে খুশি নন। আমরাও তা চাইনি। বিএমইটির ডিজিসহ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক বায়রার নেতাদের সঙ্গে সফররত সৌদি প্রতিনিধি দলের আলোচনা হয়েছে। সেখানে তারা গৃহকর্মীদের বেতন ১৭৫ মার্কিন ডলারের(সাড়ে ১৩ হাজার টাকা)এক পয়সাও বেশি দেবে না বলে জানিয়েছিল। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা ভেঙে যায়। পরে অবশ্য তারা ২২০ মার্কিন ডলারে (প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা) রাজি হয়। সুতরাং আমরা কোনো অন্যায় করিনি। এ বেতনে কাউকে জোর করে তো আর পাঠানো হবে না। যার ইচ্ছে সে যাবে।’
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘নিবন্ধন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি চলছে, চলবে। সারাদেশে বিএমইটির অধীনে সকল জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস ও ইউনিয়ন-পৌরসভায় ডিজিটাল সেন্টারে নিবন্ধন চলবে। তবে এই মুহূর্তে অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার ও বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহার উপস্থিত ছিলেন।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি গৃহস্থালীর কাজে কর্মী নিতে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি হয়।চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে ৮শ’ রিয়েলে (১৬, ৫৯২ টাকা) শুধু গৃহকর্মী (নারী) নেবে সৌদি সরকার। তবে তাদের থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসা খরচ বহন করবে সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি।এছাড়া বিমান ভাড়াও দেবে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।
ওইদিন প্রবাসী কল্যাণ সচিব জানিয়েছিলেন, অন্য ১১টি পেশার জন্য কোনো মজুরি নির্ধারণ হয়নি।
কেন নির্ধারণ হয়নি তা জানতে চাওয়া হলে ইফতেখার হায়দার বলেছিলেন, ‘আমরা কোনো মানদণ্ড ঠিক করিনি। কারণ আমার শ্রমিকরা অভিজ্ঞ হলে আরও বেশি মজুরি পেতে পারে। মজুরি ঠিক না করা হলেও কোনোভাবে ৮শ’ রিয়েলের কম হবে না।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার উম্মুক্ত করে সৌদি আরব। ২০০৮ সালে বাংলাদেশী শ্রমিক নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সৌদি আরব। কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ৪ দিনের সফরে ঢাকায় আসেন সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণায়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপমন্ত্রী ড. আহমদ আল ফাহাইদের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
৯ ফেব্রুয়ারি সফররত সৌদি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, সৌদি আরবে গৃহস্থালীর (হাউজ হোল্ড ওয়ার্কার) কাজে প্রতি মাসে বিনা খরচে ১০ হাজার কর্মী যাবে। তাদের মিনিমাম বেতন হবে ১৫শ’ রিয়েল। এর নিচে লোক পাঠাব না। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেছিলেন, ২০০৮ সালের পর সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল। এর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও বাজার গুটিয়ে নিয়েছিল। সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর লিডিংয়ে আছে। তাই সৌদি আরবের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও তাদের বাজার উন্মুক্ত করবে।