অগ্নিঝুঁঁকিতে রাজধানীর ৯৭.৫ ভাগ হাসপাতাল

0
693
blank

সাখাওয়াত হোসেন: রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার অত্যাধুনিক বহুতল ভবন কিংবা মাার্কেট কোনোটাই রেহাই পাচ্ছে না ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে। নিমতলী থেকে চকবাজারের চুড়িহাট্টা, গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেট ও বনানীর এফ আর টাওয়ার সাক্ষী হয়ে আছে আগুনের ভয়াবহতার।
চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় স্টোর রুমে অগ্নিকাÐের ঘটনায় সড়াতে হয় প্রায় সাড়ে ১২০০ রোগিকে। এর পরেও উল্লেখ্যযোগ্য কোন অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। রাজধানীর ৪৩৩টি হাসপাতালের মধ্যে ৪২২টিই ঝুঁঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে ১৭৩টি এবং সাধারণ ঝুঁঁকিতে আছে ২৪৯টি হাসপাতাল। সে হিসাবে ঢাকা শহরের শতকরা ৯৭.৫ ভাগ হাসপাতালই অগ্নিঝুঁঁকিতে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে অগ্নিঝুঁঁকি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। যেখানে প্রতি বছরই অগ্নিকাÐের ঝুঁঁকি হ্রাস পাওয়ার কথা, সেখানে পরিসংখ্যান দিচ্ছে উল্টো তথ্য। শুধু পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা বা নতুন ঢাকার বহুতল ভবনগুলোর পাশাপাশি ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীর হাসপাতাল, শপিং কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে প্রায় ৯৫ ভাগ স্থাপনা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর এসব হাসপাতাল ভবনের ধারণক্ষমতা, বেজমেন্ট আছে কি না, সাধারণ সিঁড়ির সংখ্যা ও প্রশস্ততা, জরুরি নির্গমণ সিঁড়ির সংখ্যা, লিফটের সংখ্যা, জেনারেটর রুম, ট্রান্সফর্মার রুম, সুইচ গিয়ার রুম, পাম্প রুম, ফায়ার ক›েণ্ট্রাল রুম আছে কি না, প্রতি তলায় স্মোক/হিট ডিটেক্টর আছে কি না ইত্যাদি বিষয়ের ওপর সার্ভে করেই ফায়ার সার্ভিস এই তালিকা চুড়ান্তর করেছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে দফায় দফায় নোটিশ দেয়ার পরও তারা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার উন্নয়নে কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় খুবই ঝুঁঁকিপূর্ণ হিসেবে যেসব হাসপাতালের নাম রয়েছে, সেগুলো হলো- জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউট হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ইএনটি, মেট্রোপলিটন মেডিকেল সেন্টার, হাইটেক মর্ডান সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, এস.পি.আর.সি অ্যান্ড নিউরোলজি হাসপাতাল, ফার্মগেটের আল-রাজী হাসপাতাল, ব্র্রেইন এন্ড লাইফ কেয়ার হাসপাতাল, তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিপিএইচডি জেনারেল হাসপাতাল, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, গুলশানের প্রত্যয় মেডিকেল ক্লিনিক, প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেড, গুলশান মা ও শিশু ক্লিনিক, আর এ হাসপাতাল ও বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল৷
এ ছাড়া সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার মধ্যে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, মাতৃসদন হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, মনোয়ারা হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ, ল্যাবএইড হাসপাতাল, পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টার, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেরি স্টোপ বাংলাদেশ, হলি ক্রিসেন্ট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক কমপ্লেক্স, সিকদার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সরকারি ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডি জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হাসপাতাল, ধানমন্ডি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বিএসওএইচ হাসপাতাল, প্যানোরমা হসপিটাল লিমিটেড ও ধানমন্ডি মেডি এইড জেনারেল হাসপাতাল লিমিটেড৷
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ আরো বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে দুই দফা ঢাকাসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে খুবই ঝুঁঁকিপূর্ণ এবং ঝুঁঁকিপূর্ণ হাসপাতালগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এখন নতুন করে পর্যালোচনা করা হবে।

[ইনকিলাব]