অচল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

0
1000
blank
blank

স্টাফ রিপোর্টার: পূর্বঘোষিত কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় অচল হয়েছে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোসহ ৫ দফা দাবিতে গতকাল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে একযোগে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। সীমিত আকারে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কিছু পরীক্ষা হলেও ক্লাস বন্ধ ছিল পুরোপুরি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছিল অনেকটা ছুটির আমেজ। শিক্ষকদের এমন কঠোর কর্মসূচিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কর্মসূচির কারণে ক্ষতির দায়ভার অর্থমন্ত্রীকে নিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পিছু হটার সুযোগ নেই বলে দাবি শিক্ষক নেতাদের। শিক্ষক নেতাদের দাবি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পারিস্তান শ্রীলঙ্কা, নেপালের মতো দেশ শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো আছে। ওই দেশের একজন অধ্যাপক যে কোন সচিবের চেয়ে বেশি বেতন-সুযোগ সুবিধা পান। আর বাংলাদেশের অধ্যাপকদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কার উদাহরণ টেনে শিক্ষকরা বলছেন, দাবি আদায় করতে গিয়ে ওই দেশের শিক্ষকরা টানা চার মাস কর্মবিরতি পালন করেন। বেতন-ভাতার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে ওই দেশের সরকার শিক্ষকদের দাবি মেনে নেয়। দাবি আদায়ে এবার বাংলাদেশে শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ। দাবি আদায় করে শিক্ষকরা শ্রীলঙ্কার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান। এদিকে সোমবার কর্মবিরতির প্রথমদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের রুমগুলোতে তালা ঝুলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, সোমবার কর্মবিরতির প্রথমদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের রুমগুলোতে তালা ঝুলছে। তবে পূর্ব ঘোষিত কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। কর্মবিরতিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বটতলায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়লে তার জন্য অর্থমন্ত্রী দায়ী থাকবেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমরা গত আট মাসে কঠোর কোনো আন্দোলনে যাইনি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আমাদের একবার আশ্বাস দেন, আবার সেই আশ্বাস সম্পর্কে আর কোন অগ্রগতির কথা জানান না। এখন অর্থমন্ত্রী বলছেন, শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নিয়ে তিনি কিছু জানেন না। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পূর্ণ কর্মবিরতি চলবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, বেতন কাঠামোতে ‘অসঙ্গতি’ ও বৈষম্য দূর করার দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষকরা। সোমবার দু’-একটি বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও অধিকাংশ বিভাগের নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, বেতনকাঠামোয় সৃষ্ট সংকট নিরসনে কর্মবিরতি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তবে রাবিতে গত ১লা জানুয়ারি থেকে ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত শীতকালীন ছুটি থাকায় ক্লাস বন্ধ রয়েছে। তবে অফিস খোলা থাকলেও প্রশাসনিক কোনো কাজে শিক্ষকরা অংশ নেননি। কর্মবিরতির কারণে সব ধরনের পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষকরা।
জবি প্রতনিধি জানান, বেতনস্কেলে সৃষ্ট বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এখানেও কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন জবি‘র শিক্ষকরা।
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, গতকাল কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। সকাল থেকেই শাবিপ্রবি’র সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। হয়নি কোন ক্লাস ও পরীক্ষাও। পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগে পূর্বঘোষিত পরীক্ষা নেয়া হয়নি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসবে সেখানেও সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে কর্মবিরতি পালন করছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সব শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে অংশ নেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত আন্দোলনের অংশ হিসেবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকরাও। সেখানেও শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রমেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
চবি প্রতিনিধি জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচী অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও সোমবার থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন শিক্ষকরা। কর্মসূচির প্রথমদিনেই সেখানে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষকরা। কর্মবিরতির কারণে ক্লাস পরীক্ষা না হওয়ায় ক্যাম্পাস একেবারেই ফাঁকা হয়ে গেছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষকদের এই কর্মসূচি হওয়ায় চুয়েটের আবাসিক হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন।
বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
শেকৃবি রিপোর্টার জানান, মর্যাদা অবনমন হওয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও (শেকৃবি) লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন শিক্ষকরা। কর্মবিরতি থাকায় কোনো অনুষদে পূর্ব ঘোষিত কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি।
রুয়েট সংবাদদাতা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ডাকে পে-স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) শিক্ষকরা। এছাড়াও প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করার খবর এসেছে।