আতিয়া মহলে নিহত দুই জঙ্গি

0
492
blank
blank

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকার ‘আতিয়া মহল’ এর জঙ্গি আস্তানায় এ পর্যন্ত দু’জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে যৌথ বাহিনী।

ভেতরে আরও কয়েকজন জঙ্গি রয়েছে বলে উল্লেখ করে যৌথ বাহিনীর প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, পুরো ভবনটিতে বোমা (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস- আইইডি) রেখে জঙ্গিরা ঝুঁকিপূর্ণ করে রাখায় সতর্কতার সঙ্গে চলমান ‘অপারেশন টোয়ালাইট’ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তাই অভিযান শেষ হতে আরও সময় লাগবে।

সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান রোববার (২৬ মার্চ) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল, ভেতরে জিম্মি থাকা বাড়িটির বাসিন্দাদের উদ্ধার করে নিরাপদে বাইরে নিয়ে আসা। ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে উদ্ধারের মাধ্যমে আমরা সেটি সফলভাবে করতে পেরেছি। এখনকার লক্ষ্য হচ্ছে, অভিযান পরিচালনাকারী নিজেদের সদস্যদের নিরাপদে রেখে জঙ্গি নির্মূল করা। তবে জঙ্গিরা পুরো ভবনের বিভিন্ন স্থানে আইইডি পেতে রেখেছে। ফলে ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সতর্কভাবে এগোতে হচ্ছে, অভিযানও শেষ করতে সময় লাগছে’।

তবে সবকিছু সামলে শিগগিরই অভিযান শেষ করতে পারবেন বলে আশাবাদী এই সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘অভিযান শেষ করেই বিস্তারিত জানাবো’।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাত থেকে টানা ৩০ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখার পর শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে শুরু হয়েছে অপারেশন টোয়ালাইট।  লে. কর্নেল ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে পুলিশ ও সোয়াট বাহিনীর সমন্বয়ে টানা ৩৩ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালাচ্ছেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা। শুক্রবার (২৫ মার্চ) ভোর থেকে অভিযানস্থল এবং এর আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। অভিযানস্থল পুরোপুরি কর্ডন করে রেখেছেন সেনাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

অভিযান শুরুর পর থেকে শনিবার দুপুর নাগাদ ওই বাড়িতে জিম্মি হয়ে থাকা ২৮ পরিবারের ৭৮ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় সেনাবাহিনী।

তবে অভিযান চলাকালেই শনিবার রাতে অভিযানস্থলের বাইরে ৩০০ গজ উত্তরের রাস্তায় দু’দফা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন, আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যসহ ৩২ জন।

নিহতদের মধ্যে আছেন- জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও আদালত পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু কয়সার। তারা দু’জনই পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্য ছিলেন বলে জানান জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন। অপর নিহতরা হলেন- দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের উপ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফাহিম, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম অপু, নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা ডেকোরেটর ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম ও খাদিম শাহ।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গুরুতর আহত ২ জনকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন- স্থানীয় একটি দৈনিকের সাংবাদিক আজমল হোসেন (৩০), দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি হারুনুর রশিদ এবং উৎসুক জনতার মধ্যে রিমন, নাজিম, রাসেল, ওহেদুল, ইসলাম আহমেদ, নুরুল আলম, বিপ্লব, হোসেন আবদুর রহিম, ফখরউদ্দিন, মামুন, রহীম, মোস্তাক, ফারুক মিয়া, সালাহউদ্দীনসহ ও কয়েকজন পথচারী।

ওই বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিস্ফোরণস্থল ফিতা টানিয়ে সুরক্ষিত করে রেখেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।

অভিযানস্থলের অদূরে কদমতলীর পাঠানপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে ঈদগাহে এ ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘ভেতরের নড়াচড়া দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, ভেতরে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একজন তার শরীরে লাগানো সুইসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরণ করে মারা যায়’।

ভেতরে আরও এক বা একাধিক জঙ্গি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার শরীরেই সুইসাইডাল ভেস্ট লাগানো রয়েছে’।

শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকে নানা কৌশলে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কমান্ডোরা সবাই নিরাপদে আছেন। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি’।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, ‘মর্জিনা’ নামে কোড ব্যবহার করে ওই বাড়িটিতে অবস্থান নিয়েছে জঙ্গিরা। ভেতরে নব্য জেএমবি নেতা মুছা থাকতে পারেন বলেও ধারণা করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।