আপিলের রায় প্রকাশ: ভাঙতেই হচ্ছে বিজিএমইএ ভবন

0
812
blank
blank

ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন-বিজিএমইএ এর বহুতল ভবন ভাঙার আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করবে বিজিএমইএ। মঙ্গলবার (০৮ নভেম্বর) বিকেলে আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করবেন কি না জানতে চাইলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি ও এম এন নিটওয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনউদ্দিন আহমেদ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা যতোটা দ্রুত সম্ভব আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করবো। তবে আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালত শেষ পর্যন্ত যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন সেভাবেই কাজ করবো।
এর আগে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া ৩৫ পৃষ্ঠার রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। রায়ে বিজিএমইএ’কে তাৎক্ষণিকভাবে ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছে।
অন্যথায় রায়ের প্রত্যায়িত কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) ভবনটিকে ভাঙতে বলা হয়েছে। তবে রায় প্রকাশের পর এখন রিভিউ আবেদন করার সুযোগ থাকছে বিজিএমইএ-র সামনে।
পরিবেশের ক্ষতি করে বেআইনিভাবে প্রায় এক দশক আগে ১৬তলা ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছিল। এ কারণে ভবনটি অবৈধ ঘোষণা করে তা ভেঙে ফেলতে হাইকোর্ট রায় দেন। সেই রায়ের বিজিএমইএ’র আপিল গত ২ জুন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ। সেই রায়ের পূ্র্ণাঙ্গ অনুলিপিই এখন প্রকাশিত হলো।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ বিষয়ে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মুনিরউদ্দিন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি শেষে ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
হাইকোর্ট রায়ে বলেছিলেন, ‘বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রামিত করবে।’
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।
হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের ওপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেয়। পরে এ সময়সীমা বাড়ানো হয়।
ভবনটি ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের দেওয়া ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বছর ২১ মে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল করে। সেই আপিল আবেদনটি খারিজ হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ভবনটি তৈরির কাজ শুরু হয়। যা শেষ হলে ২০০৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির উদ্বোধন করেন।