আমাকে হাসপাতালে নিন, আমার অবস্থা খুবই নাজুক: আদালতকে মুরসি

0
477
blank
blank

কায়রো: শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে স্থানান্তর করার জন্য আদালতের কাছে আকুল আবেদন করেছেন মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি। তিনি বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং দিনের পর দিন তা অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ জন্য জরুরিভিত্তিতে আমাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।

মিশরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত জনগণের ভোটে নির্বাচিত সাবেক এই প্রেসিডেন্ট শুক্রবার আদালতের কাছে এই আবেদন করেন।

আদালতকে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমি আদালতের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করিনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘নিজ খরচে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অনুমতি দিতে আমি আদালতের কাছে অনুরোধ করছি।’

আদালতের কাছে বিনীত আবেদন জানিয়ে মুরসি বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে আমাকে কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন। আমি আমার বাম চোখে কোনো কিছু দেখতে পাচ্ছি না।’

সাবেক এই প্রেসিডেন্টর অনুরোধের জবাবে আদালতের বিচারক বলেন, বিবাদীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন আছে কিনা সে ব্যাপারে প্রথমেই প্রিজন ডাক্তারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মেডিকেল পরীক্ষার আবেদনে অবশ্যই প্রিজন ডাক্তারের সাক্ষর থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারককে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে অভ্যুত্থানে জেল ভেঙ্গে পালানোর অভিযোগে মুরসিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।

সহিংসতার দায়ে চলতি বছরের ২২ অক্টোবর মিশরীয় একটি আদালত মুরসির ২০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখে।

কারাদণ্ডের মেয়াদের বিরুদ্ধে মুরসি ও তার সহবিবাদীদের একটি আবেদন মিশরের সর্বোচ্চ আপিল আদালত কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয় এবং রায় বহাল রাখা হয়।

২০১২ সালে পূর্ব কায়রোর ‘ইতিহাদিয়া প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের’ বাইরে মারাত্মক সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৫ সালের এপ্রিলে মুরসি ও সহবিবাদীদের প্রত্যেককে ২০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

অন্য দুটি মামলার বিচার ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়।

একটিতে ২০১৫ সালের জুনে মুরসিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে ‘মিশরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।

দ্বিতীয় মামলায়, ১৮ জুন মিশরের একটি আদালত গুপ্তচরবৃত্তি ও কাতারে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে মুরসির যাবজ্জীবনকারাদণ্ড দেয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে এক বছরের মেয়াদে কাতারের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি এবং নথি ফাঁস করার জন্য মুরসির সঙ্গে তার ১০ সহবিবাদীকে অভিযুক্ত করা হয়।

২০১৫ সালের মে মাসে বিচার বিভাগকে অবমাননার অভিযোগে একটি মামলার শুনানি হয়। এই মামলায় বিচার বিভাগ এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। মুরসি ও অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন চার্জের মুখোমুখি করা হয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করার প্রচেষ্টা।

মিশরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মুরসি ক্ষমতাসীন হওয়ার এক বছর পর ২০১৩ সালের জুন মাসের এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন।

ওই সময় থেকে মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডও নিষিদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। অভ্যুত্থানকারী সেনা প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সরকার দলটির উপর কঠোর দমনাভিযান চালাচ্ছে।

এ পর্যন্ত ব্রাদারহুডের হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গণবিচার করা হয়েছে।

সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর